এশিয়ার কারখানাগুলোয় উৎপাদন কমেছে
শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও চীনের কভিড নীতির কারণে এশিয়ার কারখানাগুলোয় উৎপাদন কমেছে। বৈশ্বিক মন্দাভীতি ও চীনের শূন্য কভিড নীতির কারণে গত অক্টোবরে চাহিদা কমেছে এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাও নেই বলে এশিয়ার কারখানাগুলোয় উৎপাদন দুর্বল হয়েছে। খবর: ডেইলি সাবাহ।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের কারণে এশিয়ার বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নিজস্ব আর্থিক নীতি কঠোর করছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ার উৎপাদন সংকুচিত হয়েছে। গত ২১ মাসের মধ্যে জাপানের কারখানাগুলোয় উৎপাদন ধীরগতিতে বাড়ছে। চীনের চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং উচ্চ আমদানি মূল্যের কারণে জাপানের উৎপাদন কমে গেছে।
গত মাসে চীন ও আমেরিকার দুই ক্রেডিট রেটিং (ঋণমান নির্ণয়কারী) সংস্থা যথাক্রমে সাইসিন ও এসঅ্যান্ডপির পারচেজিং ম্যানেজার’স ইনডেক্স (পিএমআই) গত অক্টোবরে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ২ শতাংশে, সেপ্টেম্বরের তুলনায় যা কিছুটা বেশি (৪৮ দশমিক ১ শতাংশ) হলে এ সূচক ৫০ পয়েন্টের নিচে অবস্থান করছে। এতে সংকুচিত হয়েছে কারখানাগুলোর উৎপাদন।
গত সোমবার বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে করা পিএমআই সূচকের জরিপের ফলে দেখা গেছে, অক্টোবরে চীনের কারখানাগুলোর কার্যক্রম অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে।
টোকিওর দাই-আইচি লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ তরু নিশিহামা বলেন, চীনে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ভীষণ নির্ভরশীল এশিয়ার দেশগুলো। দেশটির শূন্য কভিড নীতির কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল বাধাগ্রস্ত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন খাত। এতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিতে পড়েছে এশিয়া।
তার মতে, সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়াতে থাকলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে এশিয়ার ওপর এবং রপ্তানি বিঘœ হবে। নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যিক ঋণ কমলেও বিভিন্ন দেশের সরকার অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ মোকাবিলায় আরও বেশি ঋণ নিতে পারে। আইআইএফ জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান সামাজিক উত্তেজনা, জ্বালানি ও খাদ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে সার্বভৌম ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগগুলো অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় আরও ঋণ নিতে বাধ্য হবে, এমন আশঙ্কা রয়েছে।
জাপানের জিবুন ব্যাংক জানিয়েছে, ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই গত অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৭ শতাংশে। জানুয়ারি থেকে এ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে দুর্বল। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে পিএমআই ছিল ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ। গত প্রান্তিকে দেশটির অটো জায়ান্ট টয়োটা মোটর করপোরেশনের মুনাফা কমেছে ২৫ শতাংশ এবং গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানাগুলোয় টানা চতুর্থ মাসের মতো উৎপাদন কমেছে। পিএমআই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, টানা আট মাস রপ্তানি আদেশ কমে আসায় অক্টোবরে উৎপাদন কমে। দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ বাজার চীনে। চীনে শিপমেন্ট কমে আসায় গত ২৬ মাসের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানিতে ধস নেমেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের অর্থনীতিবিদ লরা ডেনম্যান দক্ষিণ কোরিয়ার পিএমআই নিয়ে বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে দেশটির মুক্ত অর্থনীতি ও রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়ে।
তাইওয়ানের পিএমআই সেপ্টেম্বরের ৪২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে অক্টোবরে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৫ শতাংশে। একই সময় মালয়েশিয়ায় ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশে, ইন্দোনেশিয়ায় যা ছিল সেপ্টেম্বরে ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অক্টোবরে ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ভারতের কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। অক্টোবরে চাহিদা থাকায় তাদের রপ্তানি আদেশ কমেনি।
জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে দেশে দেশে জ্বালানিনির্ভর শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমছে। বিশেষ করে গ্যাস-সংকটের কারণে সার, রাসায়নিক ও ইস্পাত কারখানাগুলোয় উৎপাদন অনেক কমেছে। কোনো কোনো কারখানা বন্ধেরও উপক্রম হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প জ্বালানির উৎসের দিকে ঝুঁকছে তারা।