শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে। গতকাল শুক্রবার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে সব সূচক হুড়মুড় করে পড়তে শুরু করে। করাচি স্টক এক্সচেঞ্জের (কেএসই) সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ২২৯ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৪০৭ পয়েন্টে। খবর: জিও নিউজ।
গতকাল সূচক পড়ে যায় প্রায় ২৩০ পয়েন্ট। ক্ষতি হয় হাজার কোটি রুপির। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় সূচক ২২৯ দশমিক ৬১ পয়েন্ট (শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ) কমে দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৮৬১ দশমিক ১০ পয়েন্টে।
পাকিস্তান পুঁজিবাজারের ইন্টার মার্কেট সিকিউরিটিজের প্রধান রাজা জাফরি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার হামলার পর শুক্রবার পুঁজিবাজার খোলার পর যে সূচক পড়ে যাবে, সেটা গতকালই আশঙ্কা করা হয়েছিল। দেখার ছিল সূচক কতটা পড়ে।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই পাকিস্তান পুঁজিবাজারে দোলাচল ছিল। একাধিকবার দেখা গেছে সূচকের পতন। এর আগে গত আগস্টে আরব আমিরাত পাকিস্তানের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ খাতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে এক হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘোষণা দেয়। এ খবরে করাচি স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বাড়ে ৬৭০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। এরপর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফের নেতিবাচক ধারায় ফিরে যায় পুঁজিবাজার। এর আগের মাসে মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে কেএসই সূচক থেকে ১২২২ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট উধাও হয়ে যায়। তবে গত বৃহস্পতিবার ইমরানের ওপর হামলা সরাসরি ধাক্কা দিল বাজারে।
পাকিস্তান পুঁজিবাজারে অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ও ফার্স্ট ন্যাশনাল ইকুইটিজ লিমিটেডের ডিরেক্টর আমির শেহজাদ জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। তবে ইমরানের ওপর হামলার প্রতিবাদে তার দলীয় সমর্থকরা বড় ধরনের আন্দোলনের ডাক না দিলে শুক্রবার সূচকের যে পতন ঘটল, তার দ্রুত উত্থান ঘটবে। যদিও পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত, তেমন না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। কারণ ইমরান খানের সঙ্গে শুক্রবার হাসপাতালে দেখা করতে যান দলীয় সমর্থকরা। দলের পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, বৈঠকে সে ব?্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইতোমধ্যে ইমরান খানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদের গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে দেশজুড়ে টানা বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। নেতারা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলবে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এর প্রভাব পড়বে পাকিস্তান পুঁজিবাজারে।
ধারণা করা হচ্ছে, সামনে আরও সহিংসতা হবে; যা সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। পাকিস্তানে এ মুহূর্তে এটিই (সেনাবাহিনী) একমাত্র ‘কার্যকরী প্রতিষ্ঠান’। জেনারেলরা তাদের সামনে থাকা একাধিক বিকল্পÑসামরিক আইন জারি থেকে সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। এর প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে।
ইসলামাবাদ অভিমুখে পিটিআইয়ের লংমার্চের মধ্যে বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদের আল্লাহ ওয়ালা চকের সমাবেশে ইমরান খানের কনটেইনার মঞ্চ লক্ষ্য করে চালানো এ হামলায় তিনি ছাড়াও আরও পিটিআই নেতারা আহত হয়েছেন। পিটিআইয়ের একজন কর্মী এ হামলায় নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুীর রয়টার্সকে বলেছেন, এটি স্পষ্ট হত্যাচেষ্টা ছিল। হামলাকারীকে লোকজন থামিয়ে না দিলে পিটিআইয়ের পুরো নেতৃত্বই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
ঘটনার কিছ্ক্ষুণ পর গ্রেপ্তার হওয়া এক সন্দেহভাজন হামলাকারীর একটি স্বীকারোক্তি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এতে ওই ব্যক্তি হামলার কথা স্বীকার করেছেন। হামলার একমাত্র লক্ষ্য ছিলেন ইমরান খান এবং এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেন ওই যুবক।
