যোগাযোগবিচ্ছিন্ন বরিশাল সাধারণ মানুষেরসীমাহীন দুর্ভোগ

শেয়ার বিজ ডেস্ক : বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় বরিশালে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক পথে বাস, থ্রি হুইলার ও মাইক্রোবাস এবং লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সারাদেশ থেকে জেলাটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মিলছে না যানবাহন।

গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বাস চলছে না। মহাসড়কে অন্য কোনো যানবাহনও নেই। অনেক যাত্রী ভ্যান ও রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে রিকশা ও ভ্যানের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ নেয়া হচ্ছে। বরিশাল নগরেও কোনো গণপরিবহন নেই। সড়কগুলো একদম ফাঁকা। শুধু কিছু ভ্যান ও রিকশা চলাচল করছে। বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটছেন। খবর: বাংলা ট্রিবিউন।

আজ শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি বুঝতে পেরে বরিশালের ছয় জেলা ও ৪২ উপজেলা থেকে আগেভাগেই বিএনপির নেতাকর্মীরা নগরীতে অবস্থান নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সমাবেশস্থলে আসছেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ সাত রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল চারটি লঞ্চ। একইভাবে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালগামী লঞ্চ না ছাড়ার নির্দেশনা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা কোনো কথা বলতে চাননি।

বরিশাল নগরীর সঙ্গে যুক্ত একাধিক খেয়াঘাট থেকেও পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বরিশাল নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেয়াঘাট হচ্ছে চরকাউয়া। সকালে সেখানে দেখা গেছে, সব খেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি এই ঘাটে কথা বলার মতোও কাউকে পাওয়া যায়নি। বেলা ১১টার পর থেকে দুটি নৌকায় পারাপার করতে দেখা গেছে।

খেয়া নৌকার মাঝিরা বলছেন, এক আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয়ের বিয়ে থাকায় শুধু তাদের স্বজনদেরই পার করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ পারাপারের কোনো নির্দেশ নেই।

লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কবির হোসেন নামে এক ব্যক্তি ঘোরাঘুরি করছেন। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেহেন্দীগঞ্জ যাব। কিন্তু লঞ্চ চলছে না। সবাই জানে যাত্রীরা কী কারণে লঞ্চঘাট এলাকায় ঘুরছেন এবং লঞ্চগুলো কী কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না। এমনকি কখন ছাড়বে তারও উত্তর মিলছে না। আর লঞ্চ ছাড়া মেহেন্দীগঞ্জ যাওয়ারও সুযোগ নেই। আমার স্বজন আছে বলে নিশ্চিন্ত। কিন্তু যাদের কেউ নেই, পকেটে টাকাও নেই, তারা কী করবেন বলতে পারেন? এই প্রতিহিংসার রাজনীতি কবে শেষ হবে?’

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বন্ধ রয়েছে বরিশাল থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো। বরিশাল জেলায় চলাচল করছে না কোনো ধরনের থ্রি হুইলার। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিএনপিকে আন্দোলনের বিকল্প পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসা আলী রাজ জানান, তিনি সিলেটে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গতকাল রাতে খবর পেয়েছেন তার মা অসুস্থ। তাকে দেখার জন্য বিভিন্ন যানবাহনে বরিশাল নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে আসতে পারলেও এরপর আর যেতে পারছেন না। তাকে কুয়াকাটায় যেতে হবে। কিন্তু তিনি কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। একইভাবে সেখানে থাকা একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সরকারি দল আর বিরোধী দল নয়, যারাই আন্দোলনে যাচ্ছে তারাই সাধারণ জনগণকে জিম্মি করছে। এই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি মিলবে না? রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ভিন্ন কোনো কর্মসূচি দেয়ার দাবি জানান তারা।

গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেয়ার আশঙ্কায় গত ২ নভেম্বর থেকে সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ভাড়া করে নগরীতে আসছেন। কেউ মঞ্চের পাশে আবার কেউ তাদের ভাড়া করে আনা গাড়িতেই অবস্থান করছেন। এর মধ্যেও তাদের বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বরগুনা থেকে আসা সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘সব বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা কেউ হেঁটে, কেউ সাইকেলে আগেভাগেই সমাবেশস্থলে চলে এসেছেন। শুধু নেতাকর্মীরা নয়, এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সাধারণ মানুষও। আগামীকালের গণসমাবেশ হবে সর্ববৃহৎ সমাবেশ। এখান থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে’।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০