অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খরচ বৃদ্ধি হয়ে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে যে মন্দা সৃষ্টি হয়। মন্দা অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণহীন করার পাশাপাশি জীবনমান সাম্যাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। ঘাটতি বাজেট, আয় সংকুলান, ব্যয় বৃদ্ধি, লাগামহীন খরচ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস ইত্যাদি কারণে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়। অর্থনৈতিক মন্দা একটি দেশের অর্থনীতির কাঠামো ব্যবস্থার ভিত্তিমূল নড়বড়ে করে দেয়। ফলে মূল্যস্ফীতি থেকে শুরু করে জিডিপি ও জিএনপি মান আকস্মিকভাবে বিপর্যয় ঘটে। অর্থনৈতিক মন্দা শুধু স্থানীয়, দেশীয় অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এর সঙ্গে বিশ্ববাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। এতে উক্ত দেশ দেশীয় ও বৈশ্বিক অবস্থানে নাজেহাল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
বর্তমান বিশ্ব একটি ক্রান্তিকাল সময় অতিবাহিত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়েও আলোচিত হচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি। বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন বিশ্ব। উন্নত দেশগুলো থেকে শুরু করে স্বল্পোন্নত, অনুন্নত দেশগুলো এই মন্দায় শামিল হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক মন্দার সূত্রপাত ঘটে ২০২০ সালে, যা মহামারির বছর নামে পরিচিত। কভিড মহামারির উদ্ভূত ওই বছরে বিশ্বের প্রতিটি দেশ অদৃশ্য এই শক্তির বিপক্ষে যুদ্ধ করে। ব্যবসা, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক খাতে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয় প্রতিটি দেশে। কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সময় মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
অস্থিতিশীল অর্থনীতির কাঠামো, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে ক্রমাগত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের দেশে জীবনমান আগের তুলনায় কঠিনতর হয়ে গেছে। আসন্ন এই অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন আরও নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে। বেঁচে থাকার জন্য জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হ্রাস পাবে।
মন্দার কারণে একজন মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জন করা দুরূহ হয়ে যাবে। মন্দার অভিঘাত সামাল দিতে প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে বিশেষ নজর দিতে হবে। পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক সংস্কার করতে হবে। রপ্তানি খাত ও রেমিট্যান্স প্রবাহ গতিশীল করতে হবে। আয়ের তুলনায় খরচের হার কমিয়ে সঞ্চয়ী হতে হবে।
শাহ মুনতাসির হোসেন মিহান
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়