নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক এজেন্ডায় রোহিঙ্গা ইস্যু ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তবে জাতিসংঘ বিষয়টি জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে গোয়েন লুইস এসব কথা বলেন। ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী বলেন, বৈশ্বিকভাবে অনেক ইস্যু প্রতিনিয়ত সামনে আসছে। আফগানিস্তান ইস্যুর পরপরই সামনে এলো ইউক্রেন ইস্যু। এটি এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা সমস্যা বৈশ্বিক এজেন্ডাতে ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি রোহিঙ্গা ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে করার পরামর্শ দেন গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। আর সেটি অবশ্যই হতে হবে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘ কাজ করছে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে অব্যাহত সহযোগিতা করে যাবে। আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চাই।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আবাসিক সমন্বয়কারী। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ এখন চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়ে লুইস বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি খুব চ্যালেঞ্জিং। তাদের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। সেখানে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি।
রোহিঙ্গাদের অর্থায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের দেয়া ফান্ড থেকে জাতিসংঘের স্থানীয় অফিস ব্যবস্থাপনায় মাত্র ছয় থেকে সাত শতাংশ ব্যয় করা হয়। বাকি অর্থ রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করা হয়।
ইউক্রেন ইস্যুতে আরেক প্রশ্নের জবাবে লুইস বলেন, ইউক্রেন সংকট নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এটি এখন খুব জটিল বিষয়। এ সংকট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে সংলাপ হয়েছে। এ সংকটের সমাধান জরুরি।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেন আবাসিক সমন্বয়কারী। তিনি জানান, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ছয় হাজার ৮০০ শান্তিরক্ষী রয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশের ৫০০ নারী শান্তিরক্ষী রয়েছেন। এটি খুব ইতিবাচক।
এদিকে বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাই বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ সবার জন্য কোনো রকম ভয়ভীতি-দমনপীড়ন ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশে সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক প্রশ্নের উত্তরে এই আহ্বান জানান।
ব্রিফিংয়ে নেড প্রাইসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাবে কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে নেড প্রাইস বলেন, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কসহ পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই তারা নিয়মিতভাবে বিষয়গুলো আলোচনা তুলে থাকে। তারা বিষয়গুলো যেমন ব্রিফিং রুম থেকে প্রকাশ্যে বলে, তেমনি ব্যক্তিগত আলোচনায়ও নিয়ে আসে। এটা করার মধ্য দিয়ে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সব বাংলাদেশির স্বার্থে আইনের শাসন, মানবাধিকারের সুরক্ষা ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানান।
নেড প্রাইস বলেন, ‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা আশা করি, নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের সরকার বেছে নিতে পারবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ লক্ষ্যের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, তাই বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ সব জনগণের জন্য কোনো রকম ভয়ভীতি-দমনপীড়ন ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।