পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা চায় সরকার

মাসুম বিল্লাহ: দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার যেসব বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে অর্থ সহায়তা নেয়, তার মধ্যে অন্যতম ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি)। ১৯৭৫ সাল থেকে সংস্থাটি বাংলাদেশকে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। এ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংস্থাটি বাংলাদেশের সঙ্গে কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (এমসিপিএস) বা অংশীদারিত্ব কৌশলপত্র স্বাক্ষর করে। এ চুক্তির আওতায় সরকারের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী, অর্থ সহায়তা দেয় আইএসডিবি। আগামী ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ তিন বছর মেয়াদি আরেকটি অংশীদারিত্ব কৌশলপত্র প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে। পরবর্তী কৌশলপত্রে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার আইএসডিবির সহায়তা চেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (এমসিপিএস) প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে আইএসডিবি প্রতিনিধিদল। এসব বৈঠক সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে সার্বিক সহায়তা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে গত ৩০ অক্টোবর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে চিঠি দেন আইএসডিবির বাংলাদেশ মিশন প্রধান ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাসিস সোলাইমান। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদি কৌশলপত্র চূড়ান্ত করার জন্য আইএসডিবির কারিগরি প্রতিনিধিদল ১৩ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করতে চায়। এ সফরে তারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনার আশা প্রকাশ করে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইআরডি ও আইএসডিবি যৌথভাবে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের সূচি নির্ধারণ করে।

এরই মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রতিনিধিদলটি ইআরডির সঙ্গে প্রারম্ভিক সভা সম্পন্ন করেছে। ওইদিন প্রতিনিধিদল সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পিপিপি কর্তৃপক্ষ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। এছাড়া গত তিন দিনে প্রতিনিধিদলটি বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

আরও যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিনিধিদলটি বৈঠক করবে, তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঢাকা কার্যালয়, ইডকল, এসএমই ফাউন্ডেশন, ইউএনডিপির ঢাকা কার্যালয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, অর্থ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প নিরীক্ষা অধিদপ্তর, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পূবালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদ (এনএসডিসি), আইএলওর ঢাকা কার্যালয়, ইউনিসেফের ঢাকা কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ক্রয় কারিগরি ইউনিট (সিপিটিইউ), এফএও ঢাকা কার্যালয়, ইউএন উইমেন ঢাকা কার্যালয়, ব্র্যাক, আইসিডিডিআরবি, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও এফবিসিসিআই। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করে পরবর্তী কৌশলপত্র প্রণয়নের বিষয়ে একটি ধারণা চূড়ান্ত করবে প্রতিনিধিদলটি। পরে এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে প্রকাশ করা হবে।

প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য ড. কাউসার আহাম্মদ শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা প্রতিনিধিদলকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলো অবহিত করেছি।  এছাড়া সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন পরিকল্পনা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা, ২১০০’। এটির বাস্তবায়নে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। মূলত এ দুটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে আইএসডিবির সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নগদ ডলারের সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। যেসব কারণে রিজার্ভ থেকে ডলারের পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পেয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো খোলাবাজারে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করা। এছাড়া রপ্তানি হ্রাস পাওয়া ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়াও ডলার সংকটের অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ নিয়ে রিজার্ভ শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের কাছেও বাজেট সহায়তা চেয়েছে সরকার। এসব সংস্থার পাশাপাশি আইএসডিবি থেকেও যদি স্বল্প সময়ে অর্থ পাওয়া যায়, তাহলে তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। যদিও আএসডিবি বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান নয়, তবে এ সংস্থাটি থেকেও সহায়তা গ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শুরুর পর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত সংস্থাটি এক দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংস্থাটির মাধ্যমে অর্থ সহায়তা বাড়তে শুরু করেছে।

প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন আইএসডিবির এশীয় অঞ্চলের অর্থনীতিবিদ রালান ফারুক, এশিয়ার ইউনিট প্রধান আহমেদ বিন আবদুল খালিদ, জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ জুলখিবরিল আব্দুল মজিদ, সিনিয়র প্রজেক্ট ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট ওয়াসিম আবদুল ওয়াহাব, গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি স্পোশালিস্ট ওয়াগফালি বাদজি, সিনিয়র ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট স্পেশালিস্ট শাহরিয়া ওয়ালকার, উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট স্পেশালিস্ট রাফিফ আলম, লিড ক্লাইমেট মিটিগেশন স্পেশালিস্ট ব্রাডলে টোড হিলার, টেকনিক্যাল কো-অপারেশন অফিসার ফারুকউদ্দিন মেহমুদ ও পলিসি স্পেশালিস্ট বাশির কাগরে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০