নানা সংকটে ফেনীর পোলট্রি শিল্প

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সম্প্রতি ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে কয়েক দফা। তবে মুরগির খাবার ও কীটনাশকের দাম হারে বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না মুরগি কিংবা ডিমের দাম। এতে ফেনীর পোলট্রিশিল্প-সংশ্লিষ্টরা পড়ছেন নানামুখী সংকটে। ফলে এরই মধ্যে ফেনীর অনেক উদ্যোক্তা-খামারি ব্যবসা ছাড়ছেন, কিংবা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন।

এক বছর আগেও ফেনীর সোনাগাজি উপজেলার পোলট্রি খামারি কামরুল ইসলামের খামারে আট হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। ব্যবসা ছিল রমরমা। সেই খামারে এখন মুরগি আছে তিন হাজারেরও কম। গত এক বছরে মুরগির খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ও মুরগির বাড়তি দাম না পাওয়ায় তার ২৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ফলে ব্যবসা সংকুচিত করে ফেলেছেন তিনি।

কামরুল শেয়ার বিজকে জানান, এ বছরের শুরুতেও ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম ছিল প্রতি কেজি গড়ে ৪৭ টাকা। এখন সেই খাবার কিনতে হচ্ছে ৬৮ টাকায়। ২০০ থেকে ২৫০ টাকার ওষুধের ভায়ালের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আবার কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, কিন্তু সেই তুলনায় দাম পাচ্ছি না।

এছাড়া বিশ্ববাজারে ভুট্টা ও গমের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। একই সঙ্গে সয়ামিলসহ অন্যান্য কাঁচামালের দামও বাড়তি। এতে দেশের বাজারেও পোলট্রি খাবারের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউবা উৎপাদন
করছেন কম।

এ বিষয়ে ফেনী পোলট্রি ব্যবসায়ীদের সংগঠনের কয়েকজন নেতা জানান, পোলট্রি খাদ্যের কাঁচামালের দাম অনেক ক্ষেত্রে গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে যে ভুট্টার দাম ছিল প্রতি কেজি ১৭ টাকা ৩০ পয়সা, চলতি বছরের আগস্টে সেই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ টাকা ৩০ পয়সায়।

পোলট্রি খাবারের অন্যতম উপাদান সয়ামিলের দামও বেড়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে প্রতি কেজি সয়ামিলের দাম ছিল ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা, চলতি বছরের আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭২ টাকা। একই সময়ে পোলট্রি খাবারের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৭২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭৮ টাকা। এছাড়া পোলট্রি খাবারের অন্যান্য উপাদান, চালের কুঁড়া, ক্যানোলা মিল, গমের আটা, সাধারণ লবণসহ অন্যান্য উপকরণের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

পোলট্রি ব্যবসায়ীরা আরও জানান, দেশে মুরগির খাবার তৈরির মিলগুলো কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে জটিলতার মুখে পড়েছে। তাতে আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পোলট্রিশিল্পে আরও বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি আমরা।

মুরগির খাবারের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে ক্ষুদ্র খামারিরা ব্যবসা সংকুচিত করে নেয়ায় কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র মুরগি খামারিরা।

পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফেনীর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান, চলতি বছরের মাঝামাঝিতে দেশে ৮০ থেকে ৯০ হাজার ছোট-বড় মুরগির খামার ছিল। গত কয়েক মাসে ১০ থেকে ১৫ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ করোনার আগে দেশের মুরগির খামারের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজারের বেশি। লোকসানের কারণে দিন দিন খামারের সংখ্যা কমছে।

ফেনী সদর মমতাজ মিয়ার হাটের মুরগির খামারি মামুন বলেন, খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ পাইকারিতে খামারিরা দাম পাচ্ছেন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাইকারিতে প্রতিটি ডিম ৯ টাকায় বিক্রি হলেও ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি। পাইকারি দামের চেয়ে খুচরায় ৩ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি হলেও খামারিরা এর কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না।

এদিকে খাবারের বাড়তি দামের সমস্যার পাশাপাশি খামারিদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বিদ্যুৎ-সংকট। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক খামারিকে বিকল্প হিসেবে জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাই উৎপাদন খরচ বাড়তি। খামারিরা বলছেন, শীত মৌসুমে মুরগির বাচ্চা ফুটাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। সেটি না পেলে খামারিরা আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০