স্মরণীয়-বরণীয়

বাঙালি নারী প্রগতি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, কবি, সমাজনেত্রী, ‘জননী সাহসিকা’ বেগম সুফিয়া কামালের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে জš§গ্রহণ করেন। সে সময়ে বাঙালি মুসলিম নারীদের স্কুল-কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। মায়ের উৎসাহে ও নিজ চেষ্টায় তিনি হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। বিয়ের পর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন তাকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী করে তোলেন। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় সুফিয়া কামালের প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’র (১৯৩৮) মুখবন্ধ লেখেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বইটির প্রশংসা করেন। ১৯৩২ সালে তার স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর তিনি আর্থিক সমস্যায় পড়েন। এরপর তিনি কলকাতা করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। সুফিয়া কামাল দেশবিভাগের আগে কিছুদিন বেগম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং অন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলে তার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি যুক্ত ছিলেন। এ বছরে তিনি ছায়ানটের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন এবং পাকিস্তান সরকারের দেয়া তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি একাত্তরের ডায়েরি নামে একটি দিনলিপি রচনা করেন। এ সময় তার রচিত ‘বেণীবিন্যাস সময় তো আর নেই’ কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য তিনি নারীদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সুফিয়া কামাল মুক্তবুদ্ধির চর্চার পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। তিনি ৯টি কাব্যগ্রন্থ, একটি গল্প, একটি ভ্রমণকাহিনি, একটি স্মৃতিকথা, একটি আত্মজীবনীমূলক রচনা, দুটি শিশুতোষ, একটি অনুবাদসহ ২০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ দেশি-বিদেশি ৫০টিরও বেশি পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

-কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০