নিজস্ব প্রতিবেদক: নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পলাতক জঙ্গিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সে জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকজন জঙ্গি, যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছিলাম, আমি যতটুকু জানি, আদালত তাদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুজন ছিল। বিচারকের সামনে হাজিরা শেষে আবার যখন তাদের নির্দিষ্ট রুমে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের কেমিকেল ছুড়ে অজ্ঞান করে তাদের নিয়ে পালিয়ে যায় তাদেরই কয়েকজন সমর্থক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। যদি কারও অবহেলা থাকে, গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছা করে এই কাজটি করে থাকেন, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। নিশ্চয় আমরা তদন্ত কমিটি করব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমাদের পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের। শিগগির তাদের ধরতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার পথে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। গতকাল বিকালে এমন ঘোষণা দেয়া হয়।
এর আগে সকালে ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ থেকে আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। এই দুজনই ২০১৫ সালে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় এবং জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গির মধ্যে একজন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪)। সে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। আর অপরজন আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব (৩৪)। সে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।
ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম সারোয়ার খান জাকির জানান, গতকাল সকালে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের হাজতখানায় রাখা হয়। হাজতখানা থেকে তাদের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়। শুনানি শেষে হাজতখানায় নেয়ার পথে অজ্ঞাত সাত থেকে আটজন পুলিশের দিকে স্প্রে জাতীয় কিছু ছুড়ে মেরে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ঢাকার আদালতপাড়ায় ‘পুলিশকে স্প্রে মেরে’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মহানগর পুলিশ। ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আসামিদের পালিয়ে যাওয়া ঘটনায় দায়-দায়ি?ত্ব নিরূপণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কমিটিকে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিতে যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স), যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি), উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা-লালবাগ) এবং অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সিআরও) সদস্য হিসেবে থাকবেন।
গতকাল দুপুরে পুরান ঢাকার আদালতপাড়া থেকে পালিয়ে যায় জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব।
