স্মরণীয়-বরণীয়

উপমহাদেশে বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর আজ ৮৫তম মৃত্যুবাষিকী। তিনি ভৌতবিজ্ঞানের সঙ্গে জীববিদ্যার সফল সংযোগ ঘটান এবং তার মাধ্যমে উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স তাকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করে। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমহল চন্দ্রপৃষ্ঠের একটি উল্কা গহ্বরকে তার নামে নামাঙ্কিত করেছে।

বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলায় জš§গ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে তার পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল। জগদীশের প্রাথমিক শিক্ষার শুরু ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে। ১৮৭৯ সালে তিনি কলকাতা থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক পাস করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৮৮৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৫ সালে কলকাতায় ফিরে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন এবং এখানে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। তার গবেষণার ভিত্তিতে ১৮৯৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। প্রেসিডেন্সি কলেজের ২৪ বর্গফুটের ছোট একটি ঘরে বসেই তিনি পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা এবং শারীরবিদ্যার ওপর নানা গবেষণা করেছেন। কলেজে যোগ দেয়ার এক দশকের মধ্যে তিনি বেতার গবেষণার একজন দিকপাল হিসেবে উঠে আসেন। নিজ হাতে বানানো যন্ত্রপাতি ও স্থানীয় কামারদের সাহায্য নিয়ে তিনি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বানিয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছেÑমাইক্রোওয়েভ রিসিভার ও  ট্রান্সমিটারের উন্নয়ন এবং ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র, যা দিয়ে গাছের বৃদ্ধি নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা যায়। উদ্ভিদের জীবনচক্র তিনি প্রমাণ করেন। এছাড়া তিনি বেতার বার্তার সূত্রসহ পদার্থ বিজ্ঞানের আরও গুরুত্বপূর্ণ নানা আবিষ্কার করেন।

আচার্য জগদীশ চন্দ্র ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। ১৯০০ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। ১৯১৬ সালে তিনি ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯২০ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের ফেলো এবং ১৯২৮ সালে ভিয়েনা একাডেমি অব সায়েন্সের করেসপন্ডিং সদস্যপদ পান। তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন বিজ্ঞান সমিতির সদস্য ছিলেন। তিনি কিছুকাল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রথম ফিকশন গল্পের নাম ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী।’ আর গল্পগ্রন্থের নাম ‘অব্যক্ত।’ তিনি ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর এই বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।

-কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০