মনির হোসেন মাহিন, রাবি : শিক্ষার শুরুতেই জোর দিয়ে শেখানো হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কথা। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের পাশের নোংরা টয়লেট যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কথাগুলো বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে পেরোতে পারেনি। নেই কোনো সাবান-হ্যান্ডওয়াশ, অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধযুক্ত, দরজা-জানালা ভাঙা, টয়লেটের এমন দৃশ্য আর কোথাও নয়, দেশের প্রাচ্যের কেম্ব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাডেমিক ভবনগুলোর টয়লেটের অবস্থার কথা বলছি। এমন নোংরা টয়লেট ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কলা ভবনের টয়লেটগুলো নোংরা, দুর্গন্ধ ও অপরিষ্কার। তাতে নেই কোনো প্রয়োজনীয় হাত ধোয়ার সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, টিস্যু ও কোনো টিস্যু রাখার পাত্র। যেখানে সেখানে টিস্যু রাখার ফলে টয়লেটে পানি জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া টয়লেটের কমোড ভেঙে পড়ে আছে, যা ব্যবহার অনুপযোগী। টয়লেটের মধ্যে কোমল পানির বোতলসহ, বিভন্ন ধরনের কাগজ ও ময়লার স্তূপ জমে থাকতেও দেখা গেছে। এমন দৃশ্য শুধু শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মমতাজউদ্দিন, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনগুলোতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন, চারুকলা অনুষদ ও কৃষি অনুষদের টয়লেটগুলো কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও সেগুলোতে নেই পর্যাপ্ত টিস্যু, হ্যান্ড ওয়াশ ও সাবান রাখার ব্যবস্থা। টয়লেটগুলোর বাহ্যিক দিক দেখে পরিচ্ছন্ন মনে হলেও ভেতরে নেই কোনো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এম এ জাহিদ বলেন, আমাদের ব্যবহারের টয়লেটগুলো থেকে এত দুর্গন্ধ বের হয় সিঁড়ি দিয়ে ক্লাসে যাওয়ার সময় নাক, মুখ চেপে ধরে যেতে হয়। বাথরুমে এত দুর্গন্ধ থাকে যে ভেতরে গেলে প্রায় সময় বমি চলে আসে। এছাড়া টয়লেটের দরজা ভাঙা, ভেতরে কেউ থাকলে সরাসরি বোঝা যায়। যার ফলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষকদের অফিসের টয়লেটগুলোতে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, টিস্যু এবং অডোনিল সব কিছুই থাকে। আর আমাদের জন্য সামান্য সাবান পর্যন্ত জোটে না। যদি স্বনামধন্য বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টয়লেটের অবস্থা হয় তাহলে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কী অবস্থা বাকিটা আল্লাহ জানে। এজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাবি আখি বলেন, একাডেমিক ভবনের টয়লেটগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের যথাযথ ব্যবস্থা নেই এবং যথেষ্ট পরিচ্ছন্নতারও ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের টয়লেটগুলোর পাশের সিঁড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্গন্ধ পোহাতে হয় সবাইকে। এছাড়া মেয়েদের টয়লেটগুলো অনেক সময় দেখা যায় অফিসের সময় শেষ না হতেই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পোহাতে হয় আমাদের।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের প্রধান চিকিৎসক মো. তবিবুর রহমান বলেন, হেপাটাইটিস, আমাশয়, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ায় নোংরা টয়লেট থেকে। টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে যেকোনো সময় জীবাণু আক্রমণ করতে পারে। ফলে টয়লেটগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জীবাণুনাষক সরঞ্জামাদি থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষাঙ্গনের টয়লেট পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক বলেন, প্রতিনিয়ত দুইজন সুইপার টয়লেটগুলো পরিষ্কার করেন। টয়লেটগুলো তো শিক্ষকরাও ব্যবহার করেন। কোনো শিক্ষক আজ পর্যন্ত এমন অভিযোগ করেননি। আর ভাঙা দরজা ঠিক করার দায়িত্ব ডিন অফিসের নয়। এগুলো ইঞ্জিনিয়ার সেকশন অফিসের দায়িত্ব। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা আমাদের দায়িত্ব।
শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন টয়লেট শেষে পর্যাপ্ত পানি না ঢালে তখন বাথরুম থেকে তখন দুর্গন্ধ বের হয়। টিস্যু পেপার ব্যবহার করে জমিয়ে রাখে আবার দাঁড়িয়ে দেয়ালে প্রসাব করে। এর ফলে দেয়ালে লোনা ধরছে। ফলে কিছুদিন পর পর দেয়ালে রঙ করা লাগে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কিছুদিন পরপর পরিষ্কার করবে কিন্তু পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, টয়লেটের কাজগুলোকে আমরা প্রথমেই প্রাধান্য দিচ্ছি। বিভিন্ন বিভাগের টয়লেট নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে। টয়লেটে সমস্যা থাকলে বিভাগের সভাপতি বা অনুষদের ডিন মহদয় আমাদের অবহিত করলে আমরা সেটা বিবেচনায় আনব। সমস্যার বিষয়ে আমাদের অবগত করতে হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলান বলেন, আমরা আস্তে আস্তে টয়লেটগুলোর মেরামতের কাজ করছি। সব বিভাগের একসঙ্গে মেরামত করা সম্ভব নয়। চার পাঁচটি করে টয়লেট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও উচিত টয়লেট পরিষ্কার রাখা। টয়লেট শেষে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ঢালা।
তিনি আরও বলেন, এগুলো দেখভালের দায়িত্ব প্রতিটি বিভাগের। তারা ইচ্ছা করলেই টয়লেটগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও টিস্যু সরবরাহ করতে পারেন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য এসব উদ্যোগের বিকল্প নেই। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রত্যেক বিভাগের সভাপতিকে অবহিত করা হবে বলে জানান এ উপ-উপাচার্য।