মনির হোসেন মাহিন, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যয়নরত প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু সেই পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৮ জন। এভাবেই মোট চিকিৎসকের অর্ধেক নিয়েই চলছে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মরত চিকিৎসকরাও। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের অভিযোগ, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় দেয়া হয় প্যারাসিটামল। এছাড়া বিশেষ রোগে চিকিৎসা দিতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। অনেক সময় প্যারাসিটামলও পাওয়া যায় না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শূন্য ১৮ পদের বিপরীতে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে। এছাড়া মেডিকেল সেন্টারের তিনটি কিউএস মেশিনের মধ্যে দুইটি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এ মেশিনের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা তাদের স্মার্টকার্ড ব্যবহার করে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রোগীর ব্যবস্থাপত্র, ইলেকট্রনিক রেকর্ডে সংযোজন, রোগ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নেন।
ইসিজি মেশিনের চিকিৎসক না থাকায় প্রায় আট বছর ধরে বন্ধ আছে এর কার্যক্রম। এছাড়া গাইনি বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চর্ম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, মেডিকেল সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব বহুদিনের। চুলকানির সমস্যা নিয়ে গত সপ্তাহে মেডিকেল সেন্টারে যাই। কিন্তু সেখানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।
চর্মরোগের সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে সেন্টারে গিয়েছিলেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মিলন ইসলাম। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার হাতের চামড়া উঠে যাওয়ায় চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ডাক্তার নেই। মেডিকেল সেন্টার থেকে আমাকে বলা হয়েছে, রামেকে যাওয়ার জন্য। আমার প্রশ্ন যদি রামেকে যেতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র কেন স্থাপন করা হয়েছে?
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে রাবি চিকিৎসাকেন্দ্রের ওষুধ সরবরাহ বিভাগের ইনচার্জ মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়ত দুই শতাধিকের ওপরে শিক্ষার্থী সেবা নিচ্ছে। আমাদের মেডিকেলে বর্তমানে ৫৯ ধরনের ওষুধ আছে। শিক্ষার্থীরা যদি শুধু নাপা আর প্যারাসিটামল পায় তাহলে অন্য ৫৭ পদের ওষুধ কাকে দিচ্ছি আমরা?
এ বিষয়ে রাবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন কিন্তু আমরা তাদের যথাযথ সেবা দিতে পারছি না। এতে আমাদের নিজেদেরও খারাপ লাগে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেক বিভাগ ফাঁকা হয়ে পড়ে আছে। আমি উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দ্রুত চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, তখন শিক্ষার্থীদের যথাযথ সেবা দিতে পারব।
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. তবিবুর বলেন, শিক্ষার্থীদেরও ধৈর্যশীল ও সহনশীল হতে হবে। এখানে বিভিন্ন পদের ওষুধ শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে। আমাদের এ মেডিকেল সেন্টার থেকে মূলত প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই রোগীর অবস্থা দেখে শুরুতে আমরা এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারি না। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ দিয়ে থাকি। এতে করে শিক্ষার্থীরা ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করে থাকেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। এটা তদন্তের বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। তাই যতক্ষণ সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেবে আমরা কোনো নিয়োগই দিতে পারব না। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আমরা নিয়োগ দিতে পারব।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রশাসনিক কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হয়।