নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে জনতার ঢল নেমেছে। এই সমাবেশকে ঘিরে কানায় কানায় পূর্ণ গোলাপবাগ মাঠ। জনতার ঢল নেমেছে সড়কে। মাঠ পেরিয়ে কমলাপুর ও মুগদা সড়কে জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন নেতা-কর্মীরা।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশে আসতে শুরু করেছেন বিএনপি কর্মীরা। সকাল ১১টায় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১০টা ২০ মিনিটেই কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোলাপবাগ মাঠে জায়গা না পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মানিকনগর, টিটিপাড়া ও কমলাপুরের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। দলটির নেতাকর্মীরা গ্রুপে গ্রুপে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের স্লোগানে সমাবেশস্থল ও এর আশপাশে এলাকার রাস্তায় মুখরিত হয়ে আছে।

সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমাবেশে আসার পথে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। কর্মীরা বলছেন, অকারণেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে। অনেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। কেউ আবার পায়ে হেঁটে সমাবেশে এসেছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আসা যুবায়ের নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, ঢাকার সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা ডাক দিয়েছেন। সেই ডাকে সারা দিয়ে সকল বাধা অতিক্রম করে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। আমরা এই সরকারের পতন চাই। দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা বিএনপি কর্মী কমল বলেন, সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছি। পরিবহন সংকট থাকায় কখনো হেঁটে আবার কখনো সিএনজি বা রিকশায় করে গোলাপবাগ মাঠে এসেছি। কিন্তু মাঠের ভেতরে জায়গা না পেয়ে কমলাপুরে অবস্থান নিয়েছি। সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকব।
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে সরকার ও বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা যেকোনো মাঠে করার কথা বলা হয়। বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে থাকে। এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই বুধবার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এতে একজনের মৃত্যু এবং অনেকেই আহত হন।
এরপর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাসহ অন্তত তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংঘর্ষের পর থেকে নয়াপল্টন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, আওয়ামী পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই বিভাগীয় গণসমাবেশ অণুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে দলটি ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা এবং ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ সম্পন্ন করেছে। এটি বিএনপির দশম ও শেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ।