সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন খাত থেকে পণ্য রপ্তানি বাবদ আয় ছিল ৬০ দশমিক ৯৭১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চা রপ্তানি থেকে আয় ছিল মাত্র এক লাখ ৯৫ হাজার ডলার। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে চা রপ্তানি আয় ছিল দুই লাখ চার হাজার ডলার। তখন দেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ২৯ দশমিক ৯৬৩ বিলিয়ন ডলার। গত দুই দশকের ব্যবধানে চা উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪৩ মিলিয়ন কেজি।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০০১ সালে দেশের চা বাগানগুলোয় ৫৩ দশমিক ১৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। তখন দেশের মানুষের চা পানের পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন কেজি। এ সময় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি। এরপর ২০১১ সালে দেশের চা বাগানগুলোয় ৫৯ দশমিক ১৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। সেই সময় দেশের মানুষের চা পানের পরিমাণ ছিল ৫৮ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি। রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র এক দশমিক ৪৮ মিলিয়ন কেজি। ২০১৬ সালে চা বাগানগুলোয় ৮৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। একই সময় দেশের মানুষের চা পানের পরিমাণ ছিল ৮১ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন কেজি। রপ্তানির পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ৫৬ মিলিয়ন কেজি। অর্থাৎ সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন বাড়লেও অভ্যন্তরীণ ভোগ বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে ৯৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৮ মিলিয়ন কেজি। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছিল ৭৫ দশমিক ২১ মিলিয়ন কেজি। একই বছর রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৫ মিলিয়ন কেজি।
অপরদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন খাত থেকে পণ্য রপ্তানি আয় ছিল ৬০ দশমিক ৯৭১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চা রপ্তানি আয় ছিল মাত্র এক লাখ ৯৫ হাজার ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৯ দশমিক ৯৬৩ বিলিয়ন ডলার। তখন চা রপ্তানি আয় ছিল দুই লাখ চার হাজার ডলার। অর্থাৎ নয় বছরে দ্বিগুণ হয়েছে রপ্তানি আয়। অথচ চা রপ্তানি আয় কমেছে দুই গুণ।
চা উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বছরে ১৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হতো, এর মধ্যে রপ্তানি হতো ১৫ মিলিয়ন কেজি। এরপর ১৯৭০ সালে এসে বছরে চায়ের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩১ মিলিয়ন কেজিতে। তখনও একটা বিশাল অংশ রপ্তানি হতো। নব্বইয়ের দশকে চা রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। দেশীয় চায়ের গুণগতমান ভালো হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে চায়ের চাহিদা ছিল বেশি। তাই তখন এ দেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় ওপরের দিকে ছিল চা। এরপর থেকে ধীরে ধীরে চা রপ্তানি কমতে থাকে। মূলত দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ক্রমাগত নগরায়ণের কারণে চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণে উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানি বাড়ছে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে স্থানীয় বাজারে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দেশীয় বাজারের সম্প্রসারণ হয়েছে। বর্তমানে চায়ের চাহিদা বছরে ১০০ মিলিয়ন কেজি। ফলে বাংলাদেশের এক সময়ের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি পণ্য চা রপ্তানি বাণিজ্যে বর্তমানে ভূমিকা রাখছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭৫ সালের দিকে আমাদের বাগানগুলোয় ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হতো। তখন ২০ মিলিয়ন কেজি রপ্তানি হতো। এরপর সময়ের ব্যবধানে চায়ের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চাহিদাও বাড়ে। ফলে রপ্তানি কমেছে। কারণ আগে আমাদের নিজস্ব কনজাম্পশন ফিল আপ তো করতে হবে। তাই এটা ইতিবাচক দিক। তা না হলে তো চা আমদানি করতে হতো। তখন অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়ে যেত। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালে আমাদের উৎপাদন হবে ১৪০ মিলিয়ন কেজি, তখন ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন কেজি আমরা রপ্তানি করতে পারব।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে চায়ের চাষাবাদ প্রথম শুরু হয় ১৮৪০ সালে। চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় চা বাগান অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখেনি। এরপর ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই বাগান থেকে তিন বছর পর প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। দেশে বর্তমানে ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে।