নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকঋণ নেয়া বাড়িয়েছে। তবে এ ঋণ সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকমুখী। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ৪৩ হাজার ৩০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে পরিশোধ করেছে। সরকার এ পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২৬৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে সবমিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের টাকার সংকট দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে জোগান দেয়া হয়। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। টাকার প্রবাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি কার্যকারিতা হারায়।
তারা বলেন, কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম হয়েছে। আর সরকারের ব্যয় না কমার কারণে বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। এজন্য সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগও বেড়ে যাবে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে দুই হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, আর গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ এক হাজার ২২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, গত ৩০ জুনে যা ছিল দুই লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে পাঁচ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ ৩১ হাজার ৩৮ কোটি ২০ লাখ বেড়েছে। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ নিয়েছিল ১৭ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এছাড়া নভেম্বর মাসে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের নভেম্বরে সরকারের ব্যাংকঋণের স্থিতি ছিল দুই লাখ ১৯ হাজার ৯৪৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে এসে তিন লাখ এক হাজার ২২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে ৮১ হাজার ২৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বেড়েছে।
জানা গেছে, এক বছর আগের তুলনায় ট্রেজারি বিল বন্ডে দ্বিগুণেরও বেশি সুদ পাওয়ার পরও অনেক ব্যাংকের এখন সরকারের ঋণ দেয়ার মতো সক্ষমতা নেই। বরং সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য ব্যাংক থেকে ধার করছে। এছাড়া কিছু ব্যাংকের ঋণ বিতরণের অনিয়মের তথ্য ফাঁস হলে এ সংকট আরও প্রকট হয়। গতকাল কলমানিতে চার হাজার ৭০০ কোটি
টাকা লেনদেন হয়। এছাড়া সংকটে থাকা কিছু ব্যাংকে চার হাজার ২৩০ কোটি টাকার তারল্য সহয়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার বেশি। আগের অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।