অলটেক্সের শেয়ার কারসাজিতে জসিম চক্রকে জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বিনিয়োগকারী মো. জসিম উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি মো. জসিম উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নেয়।

জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা ইমিনেন্ট সিকিউরিটিজ ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডিং ব্রোকারেজ হাউসে থাকা ১৯টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে চক্রটি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায়।

অভিযুক্ত মো. জসিম উদ্দিন চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান ও শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তিনি চাঁদপুরে থাকেন। তিনি ও তার সহযোগীরা অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে এক কোটি পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকা রিয়েলাইজড গেইন এবং  ২৭ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৩ টাকা আনরিয়েলাইজড গেইন করেন।

এর আগে চলতি বছরের অক্টোবরে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. জসিম উদ্দিনকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। তার আগে সেপ্টেম্বরে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজির অভিযোগে মো. জসিম উদ্দিনকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজিতে যে ১৯ বিও হিসাব ব্যবহার করা হয়েছে, তা পরিচালনাকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম হলোÑজে এস এন্টারপ্রাইজ, শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান, বাগরা শিক্ষিত বেকার সঞ্চয়, চাঁদপুর শিক্ষিত বেকার সঞ্চয়, ওয়ারলেস বাজার শিক্ষিত বেকার, চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি, শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয়, মো. জসিম উদ্দিন, ফরিদগঞ্জ শিক্ষিত বেকার সঞ্চয়, এসবিসিএল আমাদের পণ্য আমাদের বাজার, গৃদকালিন্দিয়া শিক্ষিত বেকার, পাটোয়ারি বাজার শিক্ষিত বেকার, শাহরাস্তি শিক্ষিত বেকার, মো. মাসুদুর রহমান শেখ, মো. মাসুদুর রহমান শেখ, মতলব শিক্ষিত বেকার সঞ্চয়, রূপসা শিক্ষিত বেকার সঞ্চয়, এসবিসিএল হাউজিং ও তোরাম নিশির্থ শিক্ষিত বেকার সঞ্চয়।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর পত্রের মাধ্যমে উল্লিখিত ব্যর্থতা তথা বিধিবিধান লঙ্ঘন-সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এজন্য সিকিউরিটিজ-সংক্রান্ত উল্লিখিত আইন ও তার অধীন জারিকৃত বিধি-বিধান পরিপালনে জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগীদের উক্তরূপ ব্যর্থতা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ২২-এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেহেতু কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনে উল্লিখিত ব্যর্থতার জন্য, তথা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পাশাপাশি বাজারের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগীদের জরিমানা করা প্রয়োজন ও সমীচীন, এ কারণে কমিশন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৭(ই)(৫)(২) লঙ্ঘন করার জন্য সেকশন ২২-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগীদের ওপর ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে। এ অর্থ আদেশের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসির অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে কমিশনে জমা করতে হবে।

জানা গেছে, জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা ২০২১ সালের ২৮ জুন থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ আড়াই মাসে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১০ টাকা ১০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ৪০ পয়সা নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ১৩১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এছাড়া কারসাজি চক্রটি ২০২১ সালের ২৮ জুন থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গড় ১৬ টাকা ২৪ পয়সা দরে ছয় কোটি ৪৩ লাখ টাকায় ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৭৬০টি শেয়ার কেনে। একই সময়ে তারা গড় ১৬ টাকা ৫০ পয়সা করে ছয় কোটি ৮৮ লাখ টাকায় ৪১ লাখ ৭১ হাজার শেয়ার বিক্রি করে। বিক্রি করা শেয়ারগুলো ক্রয়ে গড় ব্যয় হয়েছিল ১৩ টাকা ৯৭ পয়সা। যাদের হাতে এরপরও আরও সাত লাখ ৮৫ হাজার শেয়ার ছিল। ওই বিক্রি থেকে জসিম চক্র শেয়ারপ্রতি দুই টাকা ৫৩ পয়সা করে মোট এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার রিয়েলাইজড গেইন করে। এছাড়া শেয়ারপ্রতি তিন টাকা ৪৭ পয়সা করে আনরিয়েলাইজড গেইন দাঁড়ায় ২৭ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০