শতবর্ষ ধরে জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের এক গৌরবময় ইতিহাসের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষা আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, কিংবা যুদ্ধ-পরবর্তী নাগরিক সমস্যাÑকত আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস জুড়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যস্ত নগরীর কোলাহলের মাঝে আর অট্টালিকার পাহাড় ছেদ করে সবুজ গাছপালা আর দালানের এক অপরূপ মেলবন্ধন ঢাবি ক্যাম্পাস।
প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী নিজেদের মেধার পরিচয় দিয়ে ভর্তি হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির পেছনের কারিগররা তাকে সাজিয়েছেন পড়াশোনার আদর্শ পরিবেশ হিসেবে। কিন্তু এই পরিবেশই আজ গড়ে উঠেছে বহিরাগতদের পিকনিক স্পট বা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে, যার ফলে নানা সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রতিদিনই থাকে বহিরাগতদের আড্ডাস্থল হয়ে। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোয় তো এখানে পা ফেলা মুশকিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেন্দ্র টিএসসিতে তখন আর শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। তার অধিকাংশই থাকে বহিরাগতদের দখলে, যার কারণে ছুটির দিনগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা শিক্ষার্থীদের বাইরে বের হওয়াই দায় হয়ে যায়।
নজরদারিবিহীন বহিরাগতদের এমন অনুপ্রবেশের কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক চালান, চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ের সংবাদ এখন হরহামেশাই পাওয়া যায়, যার অধিকাংশের সঙ্গেই জড়িত বহিরাগতরা। এছাড়া প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের মোবাইল, মানিব্যাগ ও ল্যাপটপ চুরি হওয়ার ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে কোনো শিক্ষার্থীই নির্ভয়ে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে পারে না।
আপনি যদি কখনও গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণে বের হয়ে থাকেন, তখন হুট করেই আপনার মনে হবে হয়তো কোনো এক বস্তি এলাকায় এসে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলোয় বাড়ছে পাগল, হিজড়া ও বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা, যা অস্বস্তিতে ফেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয়, প্রায়ই ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত বিভিন্ন লজ্জাজনক ঘটনা, যা শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ঢাবির রাস্তাঘাট বেশ সুন্দর করে সাজানো। চারদিকে গাছপালার ছড়াছড়ি। রাস্তার পাশে বলনতা কিংবা ছড়িয়ে আছে কাঠগোলাপ। এই রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য। তবে বহিরাগতদের অনিয়ন্ত্রিত যানচলাচলে শহরের আর পাঁচটা জ্যামে ঠাঁসা সড়কের মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাস্তাঘাট। শুধু কি তা-ই? প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, যার ফলে রাস্তা পারাপারে শিক্ষার্থীরা রয়েছেন বেশ ঝুঁকিতে। যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত হর্ন এবং আওয়াজের কারণে পড়াশোনায় ব্যাপক বিঘœ ঘটছে আশেপাশের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে ক্লাস করা শিক্ষার্থীদের এবং সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের সম্মুখে এগিয়ে নিতে এবং পড়াশোনার রুচিশীল পরিবেশ গড়তে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য। তবে পুরোপুরি বন্ধ করা এর সমাধান নয়। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কিংবা গৌরবের সাক্ষী হতে শিশু-কিশোররা এখানে আসুক এবং ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ শিক্ষার্থী হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার জন্য স্বপ্ন বুনুক।
শাফিউল মাহিন
শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়