প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজেরনিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
দেশের পুঁজিবাজারের পরিধি ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। প্রচুর অর্থ আসছে বাজারে। কিন্তু সে তুলনায় ভালো এবং সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে না। সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কোম্পানিগুলোকে আনা সম্ভব হচ্ছে না। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে কোম্পানিগুলোও পুঁজিবাজারে না আসার জন্য টালবাহানা করেই চলেছে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিদ্যমান শেয়ারগুলো অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। মোশতাক সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ আহমদ আল কবীর, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আনিসুর রহমান এফসিএ এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও ফাহমিদা হক।
আহমদ আল কবীর বলেন, পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া নিয়ে সরকারের ইচ্ছার কোনো কমতি নেই। অর্থমন্ত্রী ২০১১-১২ সালে মিটিং করে ব্যাংকগুলোকে আসার জন্য বলেছিলেন। আরও অনেক প্রতিষ্ঠানকেও বলেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়েও আমরা শুনেছি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মার্কেটে আসতে উৎসাহিত করার কথা। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র রূপালী ছাড়া বাকি তিনটি ব্যাংকই পুঁজিবাজারে আসার সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেও মার্কেটে আসছে না। আর তাদের না আসার পেছনে দুই ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে। একটি হচ্ছে, মার্কেটে আনার জন্য যে ধরনের টেকনিক্যাল ক্যাপাসিটির প্রয়োজন তাতে ঘাটতি আছে। অন্যটি হচ্ছে, তারা আসতে ভয় পায়। তারা মনে করছে, এতে তাদের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আরও বাড়াতে হবে। হয়তো রিপোর্টিং কমপ্লায়েন্স অনেক বাড়াতে হবে। এগুলোকে তারা ঝামেলা মনে করছে। পুঁজিবাজারে না আসা ব্যাংকের এজিএম ঠিকই হয়, সব এজেন্ডাও পাস হয় কিন্তু সেখানে কোনো শেয়ারহোল্ডার না থাকায় কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু যারা পুঁজিবাজারে আছে, তাদের অনেক ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। তাদের অ্যাকাউন্টগুলোকে হালনাগাদ করতে হয় এবং বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এজিএম করতে হয়। তবে আমাদের পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির শেয়ারগুলো আসা খুবই প্রয়োজন।
আনিসুর রহমান বলেন, আমি মনে করি পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীকে খুব দৃঢ়চেতা হতে হবে। কারণ আমাদের আমলাতন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ না আনলে এসব কোম্পানিকে বাজারে আনা যাবে না। আর পুঁজিবাজারে এলে তাদের অনেক জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হবে। আজকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর অনেক প্রশ্ন করছেন। এমনকি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। যে কারণে সরকারি চাকরিজীবী বা আমলারা মনেপ্রাণে চাইছেন না পুঁজিবাজারে এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হোক। কিন্তু পুঁজিবাজারের গভীরতা যদি না বাড়ানো হয় এবং ভালো কোম্পানিগুলোকে যদি তালিকাভুক্ত না করা হয় তাহলে বিনিয়োগ আসবে কোথা থেকে?
ফাহমিদা হক বলেন, বর্তমান বাজার আগের তুলনায় বেশ ভালো অবস্থায় আছে। টার্নওভারও বেড়েছে। যদিও এ বছরের শুরুর দিকে যে টার্নওভার ছিল তা নেই। এছাড়া অনেকের ধারণা ছিল হয়তো সূচক এবার ছয় হাজার অতিক্রম করবে। কিন্তু আমি মনে করি, সূচক নিয়ে অযথাই ভাবাটা ঠিক নয়। সূচক দেখারও কোনো বিষয় নয়। আর এখন যে বাজার ভালো হচ্ছে, সেটি আমাদের গত দু-তিন বছরের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল। তিনি বলেন, জেড ক্যাটাগরির শেয়ারদর বাড়ার ক্ষেত্রে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা আসলে এসব শেয়ার যারা কিনছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনও বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর একটি ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এখন পদক্ষেপ নেওয়ায় পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন এনেছেন। তারা শুধু প্রাইজ ম্যানুপুলেশন নিয়ে কাজ করে না। প্রাইজ ম্যানুপুলেশন নিয়ে কিছু করারও থাকে না। কারণ স্বতন্ত্রভাবে যদি আপনি আপনার টাকা দিয়ে শেয়ার কেনেন সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু বলার থাকে না। তারা এখন সম্ভবত রিপোর্টিং নিয়ে কাজ করছে, যা আমাদের অনেক দিন ধরেই চাহিদা ছিল। এতে বাজারে যে গুজবগুলো রটানো হতো, সেগুলো থেকে হয়তো কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে। এটি আমার মতে, বাজারের জন্য বেশ ইতিবাচক হবে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম
Add Comment