রেজাউল করিম খোকন: ৫১ বছরের পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বিদেশিদের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল এক তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানই এখন আর্থ-সামাজিক প্রায় সব সূচকেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের চেয়ে। শুধু তা-ই নয়, পাকিস্তান ও প্রতিবেশী দেশ ভারত স্বাধীনতা অর্জনের ৭৫ বছরে যে সফলতা অর্জন করতে পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে গত ৫১ বছরে। দিনে দিনে সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। এটা আরোপিতভাবে নয়, স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ছিল একসময়ে এ অঞ্চলে। কিন্তু সেই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমেই বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবা খাতমুখী হয়েছে আমাদের অর্থনীতি। এখন আর আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির একচ্ছত্র দাপট নেই আগের মতো। নানা চড়াই-উতরাই পথ পাড়ি দিয়ে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি নানাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সমৃদ্ধি ও সাফল্যের নানা সোপান অতিক্রম করে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গণ্য হচ্ছে বিশ্বের দরবারে। এরই মধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আগামী এক-দুই দশকে এক ট্রিলিয়ন তথা এক লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে এই দেশ। গত ছয় বছরে দেশের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেটি যদি ৫ শতাংশেও নামে, তাতেও ২০৪০ সালের মধ্যেই এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। আর প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হলে ২০৩০ সালেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। বিপুল ভোক্তাশ্রেণি ও তরুণ জনগোষ্ঠী, উচ্চমাত্রায় অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা, ডিজিটাল ব্যবস্থায় অগ্রগতি ও বেসরকারি খাতের দ্রুততর বিকাশÑএসবের বদৌলতে একের পর এক অর্থনৈতিক সফলতা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন বলা হচ্ছে, দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় মূল চালিকাশক্তি হবে বেসরকারি খাত। এখান থেকে উদীয়মান চ্যাম্পিয়নরা তৈরি হচ্ছে। তারা বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছেন। সমাজেও তাদের প্রভাব আছে। গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এসব চিত্র উঠে আসে। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে করা ওই সমীক্ষার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে তারা সম্প্রতি। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিসিজির গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস হ্যান্স-পল বার্কনার বলেছেন, বাংলাদেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য রোল মডেল। এই দেশ এরই মধ্যে অনেক কিছু অর্জন করেছে। বেসরকারি খাতের অপরিসীম অবদানের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপান্তর ও দেশের বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান এই অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশকে উদীয়মান পাওয়ার হাউস বা শক্তিকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিসিজি। তাদের মতে, এই শক্তিকেন্দ্রের ভিত বা পিলার আটটি। সেগুলো হচ্ছেÑদৃঢ় আশাবাদ, ভোক্তাশ্রেণির উত্থান, ক্রমবর্ধমান তরুণ কর্মশক্তি, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা বা ঘাতসহতা, ডিজিটাল অর্থনীতির গতি, সরকারি বিনিয়োগ, বেসরকারি খাত, উদীয়মান গিগ অর্থনীতি (ইন্টারনেটভিত্তিক খণ্ডকালীন কাজ)।
বাংলাদেশের ভোক্তাদের আশাবাদ অনেক বেশি। তারা মনে করেন, ভবিষ্যতেও তাদের ক্রয়সক্ষমতা থাকবে। এই আশাবাদ বিগত দশকে দেশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করেছে, যদিও সাম্প্রতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে সেই আশাবাদ কিছুটা নি¤œমুখী। সবার প্রত্যাশা, অর্থনীতির দক্ষতাভিত্তিক রূপান্তরের কারণে আগামী প্রজন্ম উন্নত জীবনযাপন করতে পারবে। গত ৩০ বছরে দেশে বড় ভোক্তাশ্রেণি তৈরি হয়েছে। গত শতকের ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে ও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়। তৈরি পোশাক খাত, ওষুধসহ রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে ওঠে। দারিদ্র্য দ্রুত কমতে শুরু করে। ভোক্তাশ্রেণি গড়ে ওঠে। বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৬৯ শতাংশ জোগান দিচ্ছে অভ্যন্তরীণ ভোক্তাশ্রেণি। আগামী ২০৩০ সালে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে টপকে বাংলাদেশের ভোক্তাশ্রেণি বিশ্বের নবম বৃহত্তম হবে। এ ছাড়া ২০২৫ সালে বাংলাদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রবৃদ্ধি ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের চেয়েও বেশি হবে। গত ২০২০ সালে বাংলাদেশে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪০ লাখ, যা ২০২৫ সালে ৩ কোটি ৪০ লাখে গিয়ে দাঁড়াবে। বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মশক্তি বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশের মানুষের গড় বয়স বর্তমানে ২৮ বছর, যা ইন্দোনেশিয়ায় ৩১, ভারতে ২৯, থাইল্যান্ডে ৩৯ ও ভিয়েতনামে ৩২ বছর। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় ৩০ বছর। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ কাজের উপযোগী। এর মানে ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনে প্রস্তুত। বাংলাদেশের পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক ঘাতসহতা অনেক বেশি। সেইসঙ্গে জাতীয় ঋণের পরিমাণ কম হওয়াও একরকম আশীর্বাদ বটে। এ দেশের মানুষের সঞ্চয়ের হার বিশ্বের গড় হারের চেয়ে বেশি। এখানকার মানুষের সঞ্চয়ের হার মোট জাতীয় আয়ের ৩৪ শতাংশ, যেখানে বৈশ্বিক হার ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া জিডিপির প্রায় ৬৯ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ভোগ থেকে আসার কারণে বাহ্যিক নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি একরকম সুরক্ষিত রয়েছে। আবার সমপর্যায়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় ঋণের পরিমাণও কম, তা জিডিপির মাত্র ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে জাতীয় ঋণ ভিয়েতনামে ৩৯, ইন্দোনেশিয়ায় ৪১, থাইল্যান্ডে ৫৩, ভারতে ৫৬ ও ফিলিপাইনে ৬১ শতাংশ। উচ্চ সঞ্চয়ের কারণে ২০২১ সালে এ দেশের গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফরমেশনের হার ছিল জিডিপির ৩১ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য সমপর্যায়ের দেশের তুলনায় বেশি। আবার প্রবাসী আয় আসার উচ্চগতি অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা দিয়েছে। ২০২০ সালে এক হাজার ১০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল, যা গত বছর দ্বিগুণ বা দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার হয়েছে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির গতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ডিজিটাল মাধ্যমে ভোক্তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। গত ১০ বছরে মোবাইল ফোনের গ্রাহকসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে মোবাইল ফোনের মোট গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ৭০ লাখ। এ ছাড়া গত এক দশকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ উন্নত হওয়ায় প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবায় লেনদেন ৩৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, ২০১৯ সালে যা ছিল ১৭০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। তার মানে চার বছরের ব্যবধানে তা দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারের সক্রিয় ভূমিকাও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে। গত এক দশকে সরকারের ব্যয় চার গুণ বেড়েছে। ২০১২ সালে যেখানে সরকারের ব্যয় ছিল ৫৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার, সেখানে তা চলতি বছরে বেড়ে দুই লাখ ২৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার হয়েছে। সেইসঙ্গে বিগত কয়েক বছরে সরকারের প্রচেষ্টায় এ দেশে সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আবার মাথাপিছু বিদ্যুৎ সরবরাহ ৩০০ কিলোওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া বড় কিছু পরিকল্পনা, যেমন স্মার্ট বাংলাদেশ আইসিটি ২০৪১ ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেবে। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত সম্প্রসারণশীল, যা প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনেক বড় হয়েছে, যাদের কারণে দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেই মনে করছে বিসিজি। বৈশ্বিক বস্ত্র ও পোশাক খাতের সরবরাহ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী। এই খাতের আরও প্রবৃদ্ধি হবে। কারণ বড় পোশাক রপ্তানিকারকেরা বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বিকাশ হয়েছে। যদিও মাত্র তিনটি কোম্পানির হাতেই সিংহভাগ বাজার। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের নবম বৃহত্তম মোবাইল বাজার। দেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা আছে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও)। গত এক দশকে বাংলাদেশে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোও বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। দেশে এখন স্টার্টআপ কোম্পানির সংখ্যা এক হাজার ২০০। স্টার্টআপগুলো বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করছে, যার মধ্যে আছে প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা, ই-কমার্স ও লজিস্টিকস। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ বাংলাদেশের প্রথম ইউনিকর্ন (মূল্যমান ১০০ কোটি ডলার), যেখানে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সফট ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে। বর্তমানে বিকাশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এমএফএস কোম্পানি। গত কয়েক বছরে আরও কয়েকটি কোম্পানি ইউনিকর্ন হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়েছে, যার মধ্যে আছে শপআপ, চাল-ডাল ও পাঠাওয়ের মতো প্রতিষ্ঠান। স্টার্টআপ খাত প্রায় ৭০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। সরকারও স্টার্টআপ বাংলাদেশ নামে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল গঠনের মাধ্যমে খাতটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নানাভাবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় শিল্প গ্রুপের অবদান কম নয়। বিশেষ করে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির কথা বলা হয়েছে, যারা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উদীয়মান কোম্পানিগুলোকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। বিসিজির ভাষ্য, ভবিষ্যতে আরও বড় হওয়ার মতো সুযোগ রয়েছে তাদের। সাহসের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার এই মানসিকতা কোম্পানিগুলোর বড় গুণ। বিসিজির সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ৫৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই অর্থপূর্ণ সামাজিক পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রাখে। ৮৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাহসী। ৩৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আরও উন্নত সেবা দিতে চায়। ৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস করে, সার্বক্ষণিক পরিবর্তনের সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রয়োজন। ৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের বিস্তৃত করতে চায়। আগামী দিনে উদীয়মান চ্যাম্পিয়ন কোম্পানিগুলোকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহে আরও দক্ষ হতে হবে। বেসরকারি মূলধন ও ব্যক্তিগত অর্থায়নের ওপর ভর করেই করপোরেট খাত প্রাথমিকভাবে বেড়ে উঠছে। কিছু ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। তবে বাংলাদেশের কিছু উদীয়মান কোম্পানি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে। অবশ্য কোনো আখ্যানই একরৈখিক নয়, উত্থান-পতন সব জাতির জীবনেই আসে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। আগামী অর্থবছরেও সংকট আরও বাড়তে পারে। গত ১০-১৫ বছরে অর্থনীতিতে এমন চাপ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে কিছু অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা ভালো অবস্থানে আছে। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে খরচের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আগামী দিনগুলোয় আরও নতুন নতুন অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সংকটে পড়তে পারি আমরা। সেরকম চিন্তা মাথায় রেখে এখন থেকে সাবধানতা অবলম্বন করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় কোনোভাবেই যাতে সীমা অতিক্রম না করে, সেদিক খেয়াল রাখতে হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী দিনে রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়বে। অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি বিচক্ষণতা প্রয়োজন। আমরা তো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন নই। ফলে আমাদের বুঝতে হবে, কখন কোথায় কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নির্ধারণ করবে সরকার। সরকার যেভাবে ভালো মনে করবে, সেভাবেই পরিচালিত হবে। সরকার যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে এক লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি হওয়ার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক