সোনালি আঁশ পাটের জীবনরহস্য উম্মোচনকারী জিনতত্ত্ববিদ ড. মাকসুদুল আলমের আজ অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উম্মোচনের গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে সোনালি আঁশের সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। তারই নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেটাসফটের একদল গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উম্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা। ড. মাকসুদুল আলম ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফরিদপুরে জš§গ্রহণ করেন। তার বাবা শহিদ দলিলউদ্দিন আহমেদ ইপিআরের (বর্তমান বিজিবি) কর্মকর্তা ছিলেন। মাকসুদুল আলম গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রাশিয়ায় চলে যান। ১৯৭৯ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি অণুপ্রাণবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অণুপ্রাণবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন মাকসুদুল। এর পাঁচ বছর পর জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব বায়োকেমিস্ট্রি থেকে প্রাণরসায়নেও তিনি পিএইচডি করেন। ১৯৯২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই কেন্দ্রে কাজ করার সময় তিনি লবণ-আকর্ষী আর্কিয়ার ভৌত-তড়িৎ রূপান্তর সংকেতকে বিশ্লেষণ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি আবিষ্কার করেন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হেলো ব্যাকটেরিয়ামের জীবনরহস্য। এর পর থেকে তার নামের সঙ্গে একের পর এক নিয়মিত যুক্ত হতে থাকে নানা প্রাণরহস্য উম্মোচনের কৃতিত্ব। ২০০১ সালে মাকসুদুল আলম হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে তিনি কাজ করেন। ২০০৩ সালে তিনি সেখানে বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞান, প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান ও জৈব তথ্যবিজ্ঞানে অগ্রসর গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি মনোনিবেশ করেন তোষা পাটের জিন নকশা উম্মোচনে নেতৃত্বদানে। মাকসুদুল আলম ২০১০ সালে পাটের জীবনরহস্য উম্মোচনে করে দেশে-বিদেশে সাড়া জাগান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে পেঁপে, মালয়েশিয়ার হয়ে রাবার ও বাংলাদেশের হয়ে পাট ও ছত্রাকের জীবনরহস্য উম্মোচন করেন। এই গুণী বিজ্ঞানী ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা