আতাউর রহমান: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার ও লুব-রেফের (বাংলাদেশ) পরিচালনা পর্ষদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ কোম্পানি তিনটির পরিচালনা পর্ষদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিএসইসির অফিস প্রাঙ্গণে বৈঠকের জন্য তলব করা হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কোম্পানি তিনটির প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ জন্য কোম্পানিগুলোকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র বৈঠকে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। সম্প্রতি বিবিধ খাতের ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার ও লুব-রেফের (বাংলাদেশ) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে বৈঠকের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
একই সঙ্গে বিষয়টি ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ইস্যু ম্যানেজার এএফসি ক্যাপিটাল ও ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের ইস্যু ম্যানেজার লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট ও লুব-রেফের ইস্যু ম্যানেজার এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
কোম্পানি তিনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো পৃথক পৃথক চিঠিতে উল্লেখ করে বলে হয়েছে, কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য প্রকাশিত প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চায় কমিশন। এ জন্য কমিশনের ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের সঙ্গে একটি বৈঠক করা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০ ডিসেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) এবং কোম্পানি সচিবকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঙ্গে আনার নির্দেশ দেয়া হয়। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে জানতে ইনডেক্স এগ্রোর কোম্পানি সচিব আবু জাফর আলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, বৈঠকের বিষয়ে চিঠি পেয়েছি এবং আমরা যাচ্ছি। আমাদের আইপিও তহবিল এখনও ব্যবহার শুরু হয়নি। পুরো টাকা এখনও আছে। তবে আইপিও তহবিল থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য বিএসইসিতে আবেদন জানিয়েছি, কিন্তু এখনও অনুমোদন পায়নি। অনুমোদন পেলে ঋণ পরিশোধ করা হবে।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ রানা শেয়ার বিজকে জানান, আমরা আগামীকাল (আজ) বৈঠকে যাচ্ছি। এর আগে আইপিও তহবিল পুরোটাই ব্যবহার হয়েছে এবং সেটার তথ্য আমরা দিয়েছি। এছাড়া আমাদের তেমন কিছু জানানোর নেই। তবে আইপিও তহবিল ব্যবহারের তথ্য ও নথি নিয়ে যাওয়া হবে। কোনো কিছু জানতে চাইলে তখন জানাব।
একইভাবে লুব-রেফের কোম্পানি সচিব মশিহুর রহমান শেয়ার বিজকে নিশ্চিত করেন এবং ব্যাখ্যা ও নথিসহ বিএসইসির তলবে বৈঠকে আজ যাবেন বলেন জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। পরে কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৮২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৯টি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানিটির শেয়ারের কাট-অব প্রাইস নির্ধারণের জন্য ওই বছরের নভেম্বরে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। আর গত ১০ সেপ্টেম্বর বিএসইসির ৭৩৯তম সভায় কোম্পানির বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে জানায়, পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহীত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ বিল্ডিং নির্মাণ, নতুন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ খাতে ব্যয় করা হবে।
অন্যদিকে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। এর আগে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের আইপিও অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। পরে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ২২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর আগে কোম্পানিটির কাট-অব প্রাইস নির্ধারণে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিডিং (নিলাম) অনুষ্ঠিত হয়। বিডিংয়ে কোম্পানিটির কাট-অব প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩২ টাকা। কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে জানায়, পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহীত অর্থ দিয়ে সাবসিডিয়ারি কর্ণফুলী পাওয়ার ও বারাকা শিকলবাহা পাওয়ারে বিনিয়োগ, দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আংশিক পরিশোধ এবং আইপিওজনিত ব্যয়ে ব্যবহার করা হবে।
এছাড়া লুব-রেফ (বাংলাদেশ) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। এর আগে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য লুব-রেফের আইপিও অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। পরে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ১৪৪টি শেয়ার ইস্যু করে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। বিডিংয়ে কোম্পানিটির কাট-অব প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে জানায়, পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়া খাতে ব্যবহার করা হবে।
