অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আট চালিকাশক্তি

আবুল কাসেম হায়দার: বাস্টন কনসালর্টি গ্রুপের (বিসিজি) প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উদীয়মান কোম্পানিগুলোকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। বিসিজির ভাষ্য, ভবিষ্যতে আরও বড় হওয়ার মতো সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশকে উদীয়মান পাওয়ার হাউস বা শক্তিকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিসিজি। তাদের মতে, সেগুলো হচ্ছেÑদূর আশাবাদ, ভোক্তাশ্রেণির উত্থান, ক্রমবর্ধমান তরুণ কর্মশক্তি, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা, ডিজিটাল অর্থনীতির গতি, সরকারি বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাত উদীয়মান অর্থনীতি তথা ইন্টারনেট-ভিত্তিক খণ্ডকালীন কাজ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে। এমনকি ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। আগামী দু-এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক ট্রিলিয়ন তথা এক লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশের গড় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। গড় প্রবৃদ্ধি যদি পাঁচ শতাংশে নেমে আসে তবুও ২০৪০ সালের মধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। আর প্রবৃদ্ধি যদি ১০ শতাংশ হয়, তবে ২০৩০ সালেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। বিগত ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসালটি ফার্ম বোস্টন কলসান্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক সমীক্ষায় বিসিজি গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস হ্যান্স পল বার্কনার বলেন, বাংলাদেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য রোল মডেল। এই দেশ এরই মধ্যে অনেক কিছু অর্জন করেছে। বেসরকারি খাতের অপরিসীম অবদানের ফলে তা সম্ভব হয়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপান্তর ও দেশের বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান এই অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আট চালিকাশক্তি: বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকাশের পেছনে যেসব শক্তি কাজ করছে, তা হচ্ছে নিচে উল্লেখিত আটটি বড় শক্তি। অদম্য সাহস ও বুদ্ধিমত্তার জন্য আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা প্রবল গতিতে এগিয়ে চলেছে।

ভোক্তাদের দৃঢ় মনোবল: বাংলাদেশের ভোক্তারা অনেক বেশি আশাবাদী। সব বাধাবিপত্তির মধ্যেও দেশের যুবসমাজ মনে করে, ‘আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের উপার্জন বৃদ্ধি পাবে। আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়তে থাকবে।’ তাই বছর বছর এই আশাবাদ দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করেছে, যদি করোনা পরিস্থিতি এবং পরবর্তীকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাম্প্রতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে পড়ায় আশাবাদ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তারপরও ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতার প্রত্যাশাÑঅর্থনীতির দক্ষতাভিত্তিক রূপান্তরের কারণে আগামী প্রজš§ উন্নত জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে।

ক্রমবর্ধমান তরুণ কর্মশক্তি: বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। তরুণ কর্মশক্তি বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এটি অন্য দেশে তেমন দেখা যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় বয়স ২৮ বছর, যা ইন্দোনেশিয়া ৩১, ভারতে ২৯ ও থাইল্যান্ডে ৩৯ বছর। ভিয়েতনামে ৩২ বছর। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় ৩০ বছর। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ কাজের উপযোগী। এর অর্থ হচ্ছে ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করার সক্ষমতা রাখে।

ভোক্তাশ্রেণির উত্থান: বিগত ৫০ বছরে দেশে বড় আকারে ভোক্তাশ্রেণি তৈরি হয়েছে। ১৮ কোটি দেশের বাংলাদেশ এখন বিপুল ভোক্তা। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৮০০ ডলারের বেশি। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসকের পতনের পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার হাত ধরে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। তৈরি পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব এনে দেয়। ওষুধশিল্পসহ কতিপয় শিল্প রপ্তানিতে অবদান রাখে। দ্রুত দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ভোক্তাশ্রেণি গড়ে ওঠে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৬৯ শতাংশ জোগান দিচ্ছে আভ্যন্তরীণ ভোক্তাশ্রেণি।

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে: বাংলাদেশের মানুষ নানা সমস্যা মোকাবিলা করে বেঁচে আছে। অন্যদিকে মানুষের মাথাপিছু ঋণ এখনও কম নয়। সঞ্চয়ের গড়হার পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় বেশি। তখন মানুষের মোট সঞ্চয়ের হার জাতির আয়ের ৩৪ শতাংশ, যেখানে বৈশ্বিক হার মাত্র ৩৪ শতাংশ। তাছাড়া জিডিপির প্রায় ৬৯ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ভোগ থেকে আসার কারণে বাহ্যিক নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি একরকম সুরক্ষিত রয়েছে।

সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের জাতীয় ঋণের পরিমাণ কম, তা জিডিপির মাত্র ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে জাতীয় ঋণ ভিয়েতনামে ৩৯, ইন্দোনেশিয়ায় ৪১, থাইল্যান্ডে ৫৩, ভারতে ৫৬ শতাংশ ও ফিলিপাইনে ৬১ শতাংশ। উচ্চ সঞ্চয়ের কারণে ২০২১ সালে বাংলাদেশের শ্রম ফ্রিক্সড ক্যাপিটালের হার ছিল জিডিপির ৩১ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য সমপর্যায়ের দেশের তুলনায় বেশি। আবার প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ গতিশীল। ২০২০ সালে এক হাজার ১০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছর দ্বিগুণ বা দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার।

ডিজিটাল অর্থনীতি: ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। তাই বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতির গতি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোক্তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। বিগত ১০ বছরে মোবাইল ব্যবহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে মোবাইল ব্যবহƒত হয় মাত্র ১৭ কোটি ৭০ লাখ। ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ৭০ শতাংশ। প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবায় লেনদেন হয় ৩৫০ কোটি ডলার, ২০১৯ সালে যা ছিল মাত্র ১৭০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। বিগত চার বছরে তা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।

সরকারের বড় উদ্যোগ: সরকারের মেগা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে। বিগত এক দশকে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি ছিল ৫৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার, সেখানে চলতি অর্থ বছরে ব্যয় দাঁড়ায় দুই লাখ ২৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বর্তমানে দেশে মানবতার হার ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ সরবরাহ ৩০০ কিলোওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। তাছাড়া সরকার বড় পরিকল্পনা দেশকে এগিয়ে নেয়া। ২০২১-২০৪১ পরিকল্পনা বাংলাদেশকে আরও বেশি এগিয়ে নেবে।

বেসরকারি খাতের উত্থান: বাংলাদেশের বেসরকারি খাত হচ্ছে দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। অনেক বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বড় আকারে এগিয়ে এসেছে, যার ফলে দেশের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি সম্ভাবনাময় বলে মনে করে বিসিজি।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাত তথা বস্ত্র খাত দেশের অর্থনীতির ভিতকে করে অনেক মজবুত। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশ্বের সবকটি গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে।

দেশের টেলিযোগাযোগ খাত বেশ এগিয়ে চলেছে। মোবাইল তিনটি কোম্পানি গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংক মোবাইল ব্যবসার সিংহভাগ অপারেট করে থাকে। সরকারি টেলিটক অনেক পিছিয়ে। অথচ দেশের মোবাইল ব্যবসার সিংহভাগ টেলিটকের থাকা উচিত ছিল। দুর্নীতি ও অব্যবস্থার জন্য টেলিটক এখন তলানিতে।

দেশের দারিদ্র্য দূর ও বেকার সমস্যা সমাধানে বড় অবদান রাখছে এনজিও। গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাক দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে অনেক অবদান রাখছে। এছাড়া আরও কয়েক ডজন এনজিও বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে, চরে ও বিলে দেশ উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

গত এক দশকে বাংলাদেশে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। দেশে এখন স্টার্টআপ কোম্পানির সংখ্যা এক হাজার ২০০টি। স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো নানা খাতে ব্যবসা করছে, এতে রয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা, ই-কমার্স ও লজিংস্টিকস। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এনএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ বাংলাদেশের প্রথম ইউনিকর্র্ন (মূল্যমান ১০০ কোটি ডলার), যেখানে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সফট ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে। বর্তমানে বিকাশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এমএফএস কোম্পানি। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আরও কয়েকটি ইউনিকর্ন কোম্পানি হওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে শপআপ, চালডাল ও পাঠাওয়ের মতো প্রতিষ্ঠান। স্টার্টআপ খাতে প্রায় ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। সরকার ডেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল গঠনের মাধ্যমে এর খাতকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কথা ওই তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাণ-আরএফএল পৃথিবীর ১৫০টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। করপোরেট খাতের নৈপুণ্যের জন্য স্কয়ার ও রেনাটার নাম ফোর্বসের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তালিকায় উঠে এসেছে।

বিসিজির তথ্যে সাত কোম্পানি: ওয়ালটন, প্রাণ-আরএফএল, সামিট গ্রুপ, বিকাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, পিএইচপি ও রেনাটা লিমিটেডের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিসিজি গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ৫৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই অর্থপূর্ণ সামাজিক পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রাখে। ৮৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাহসিকতাপূর্ণ। ৩৮ শতাংশ আরও উন্নত সেবা দিতে চায়। ৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস করে, সার্বক্ষণিক পরিবর্তনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের বিস্তৃত করতে চায়।

ভবিষ্যৎ উন্নত জীবনের আশায় করণীয়: ১. আমাদের অনেক বেশি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যেতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে যেতে হবে।

২. দুনীর্তি ও অনিয়ম থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। সমাজের সব স্তর থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মকে ‘না’ বলতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকারকে অবস্থান করতে হবে।

৩. সমাজ ও রাষ্ট্রে আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। বিচারকে মানুষের দ্বারে পৌঁছাতে হবে। ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করতে হবে। সুশাসনেই আমাদের সব বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে।

৪. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান বিষয়। তাই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বৃহত্তর সমঝোতা থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমানে আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘদিন চললে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশেও দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ হারিয়ে যাবে। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক অস্থিরতা অবশ্যই দূর করতে হবে।

সুশাসনের জন্য, আইনের শাসনের জন্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সব সময় জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দেশে-বিদেশে সবার গ্রহণযোগ্য হতে হবে। ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হওয়ার পথে বাংলাদেশকে কোনোভাবেই পথ হারালে চলবে না। ১৪ বছর ধরে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। তাই একই সরকারকে তিন-তিনবার সরকারের দায়িত্ব পালনের ফলে মেগা প্রকল্প নেয়া ও বাস্তবায়নের পথে সরকার এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়েছে।

৫. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কেলেঙ্কারি, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় আর্থিক খাতের সমস্যা সমাধানের বিষয় কখনও নেয়া উচিত হবে না। অর্থ পাচার ও অর্থ লুট বন্ধ করার জন্য সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী না করতে পারলে বেসরকারি বিনিয়োগ কখনও বৃদ্ধি পাবে না। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। দেশ ও মানুষের জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের জন্য হোক আমাদের সব চেষ্টা, কাজ, পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। তবেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। আমরা ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সব বাধা দূর হবে।

৬. দেশের সাংবিধানিক খাত বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন কমিশনসহ সব খাতকে স্বাধীন ও স্বকীয় চিন্তায় স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে আরও বেশি দায়িত্বশীল জাতি হিসেবে দেখতে চাই।

৭. আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাব দেশের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এসব প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত। এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি জাতিকে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

৮. করোনা-পরবর্তী প্রভাবে ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমাদের শিল্পব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, আর্থিক খাত ও শিক্ষা খাত বড় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বমানের অর্থনীতির জন্য বিশ্বমানের ব্যবস্থা ও শাসনের প্রয়োজন রয়েছে। উন্নত দেশে পৌঁছার জন্য সমানভাবে আমাদের অর্থনীতিকে সবার জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দ্রুত হ্রাস করা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যাংক খাতের অনিয়ম, অবিচার ও দুর্নীতি জাতিকে আজ জিজ্ঞাসার সারিতে দাঁড় করিয়েছে। এই অবস্থার দ্রুত অবসান প্রয়োজন। সরকারের দৃশ্যমান মেগা প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে উল্লিখিত তিনটি খাতের সংস্কারের জন্য প্রয়োজন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মেগা প্রকল্প। তবেই সরকারের উন্নয়নের মেগা প্রকল্পের সুফল মানুষ দেখতে পাবে, উপভোগ করতে পারবে এবং জীবন ও মানের কল্যাণে শত পরিশ্রম কাজে লাগবে।

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

আইএফআইএল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম

aqhaider@youthgroupbd.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০