স্মরণীয়-বরণীয়

উপমহাদেশের প্রথিতযশা স্থপতি মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম। বাংলাদেশের স্থাপত্য পেশা চর্চার পথিকৃৎ তিনি। তিনিই বাংলাদেশের স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রথম সভাপতি ছিলেন। প্রায় ছয় দশকের বেশি সময় তিনি এদেশের স্থাপত্যকর্মে ভূমিকা রাখেন। মাজহারুল ইসলাম মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণসহ নানা সময়ে বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। মাজহারুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ১৯২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ও পদার্থবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি পুরকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে থাকাকালেই সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় সিবিঅ্যান্ডআই মন্ত্রণালয়ে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। পরে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি অরিগন ইউনিভার্সিটিতে স্থাপত্যবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চলে যান। ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে তিনি সিবিঅ্যান্ডআই মন্ত্রণালয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ট্রপিক্যাল আর্কিটেকচার পড়তে লন্ডনের স্কুল অব আর্কিটেকচারে যান। এ সময় তিনি একের পর এক তাৎপর্যপূর্ণ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকর্ম রচনা করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য অনুষদ চালুর ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তার স্থাপত্যকর্ম ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছে। ঢাকায় তার স্থাপত্যকর্মের মধ্যে চারু ও কারু মহাবিদ্যালয় এবং গ্রন্থাগার ছাড়াও বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার, জাতীয় জনপ্রশাসন ইনস্টিটিউট, সড়ক গবেষণাগার, কৃষি ভবন, ইস্টার্ন ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ভবন প্রভৃতি। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনা ও বিভিন্ন ভবন, রূপপুর পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের আবাসিক এলাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনা ও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভবন রয়েছে। কর্মজীবনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টের জাতীয় সম্মেলনে ফেলোশিপ অর্জন করেন। মাজহারুল ইসলাম ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রথম স্বর্ণপদক ও ভারতের জেকে সিমেন্ট আয়োজিত স্থাপত্যশিল্পে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ‘গ্র্যান্ডমাস্টার অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। বিভিন্ন সময় দেশের প্রগতিশীল আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১২ সালের ১৪ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০