বডি শেমিংকে ‘না’ বলুন

আমরা প্রতিনিয়ত বডি শেমিংয়ের শিকার হচ্ছি। আর যাদের দ্বারা হচ্ছি তারা আর কেউ নয় এই আপনি, আমি, আমরাই। আপনি হচ্ছেন আমার দ্বারা, আমি হচ্ছি আপনার দ্বারা। পার্থক্যটা হলো আপনি যখন আমাকে বডি শেমিং করছেন, তখন আপনার কাছে মনে হয় না এটা ‘বডি শেমিং’;  কিন্তু আমি যখন আপনাকে করছি, তখন সেটা আপনার কাছে বডি শেমিং মনে হচ্ছে। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন বডি শেমিংটা আসলে কী, বা সমস্যা কী? সংজ্ঞা অনুযায়ী আপনি যদি কারও দেহের আকার, আয়তন বা ওজন নিয়ে প্রকাশ্যে এমন কোনো সমালোচনা বা মন্তব্য করেন, যাতে সেই মানুষটি লজ্জাবোধ করেন বা অপমানিত হন, তবে তা বডি শেমিং।

যেমন ওজন বেশি হলে ‘মোটকু’, শীর্ণকায় হলে ‘চিকনা’, বেশি লম্বা হলে ‘লম্বু’ প্রভৃতি শব্দবাণে জর্জরিত হতে হয়। গায়ের রং নিয়ে নারী-পুরুষ সবাইকে বিদ্রুপের শিকার হতে হয়, যেটাকে বলা হয় ‘বডি শেমিং’। অনেক সময় কেউ নিছক মজার জন্য এমন করেন, কেউ আবার না বুঝেই এমন মন্তব্য করে ফেলেন, যেটা অপরের জন্য মনঃকষ্টের কারণ হয়।

আমাদের সঙ্গে যখন কারও দেখা হয়, আমরা সর্বপ্রথম এই বডি শেমিং দিয়ে আলোচনা শুরু করি। যেমনÑকী অবস্থা তোর, তুই তো অনেক শুকিয়ে গিয়েছিস, তোর চোখের নিচে এমন কালি পড়ল কী করে, তোর তো অল্প বয়সে চুল পেকে যাচ্ছে, তুই তো কালো হয়ে গিয়েছিস প্রভৃতি। মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হয়Ñতোমার মুখে এমন কালো দাগ পড়ল কীভাবে; মুখের যতœ নাও, না হয় বিয়ের সময় কিন্তু সমস্যা হবে; তোমার চুলগুলো এত খাটো কেন, মেয়েদের চুল এত খাটো হলে ভালো দেখায় না; তুমি এমন চিকন হলে কীভাবে, হরিণের বাচ্চার মতো হয়ে গেছ, মেয়েরা এত চিকন কেমন দেখায় প্রভৃতি।

কাউকে শারীরিক গঠন নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন করলে বা উপদেশ দিলে ওই ব্যক্তি নিশ্চুপ থাকেন অথবা হাসিমুখে কিছু একটা বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আপনি বুঝতে পারবেন যদি আপনি কখনও এরকম প্রশ্ন আর উপদেশের সম্মুখীন হন এটা কতটা বিব্রতকর, কতটা কষ্টের এবং কতটা মানসিক চাপ ফেলে। আপনি হয়তো ভাবছেনÑআমি তো তার ভালোর জন্যই বলছি, আমি তো তার খারাপ চাই না। কিন্তু আদৌ কি তার জন্য এটা ভালো কিছু বয়ে আনে? গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ বডি শেমিংয়ের ফলে একধরনের মানসিক চাপ অনুভব করে, যার ফলে তার শারীরিক ও মানসিক আরও অবনতি ঘটে। এর ফলে অনেক সময় কেউ কেউ নিজেকে আঘাত করা বা আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেন। শৈশবে বা কৈশোরে বডি শেমিংয়ের মুখোমুখি হলে পরিণত বয়সে কারও কারও মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিকার (পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার) দেখা দিতে পারে। তাই যা বলে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করতে যাচ্ছেন, তা যদি তার জন্য ভালো না হয়ে বরং কষ্টের কারণ হয়, তাহলে না বলাই ভালো। এত কঠিন ভালো কিছু না করে এমন অনেক কাজ আছে, যা খুব সহজে আপনি করতে পারেন। যা আপনার জন্য, মানুষের জন্য এবং জাতির জন্য মঙ্গল, সেগুলো করুন। নিজে ভালো থাকতে হবে, সুস্থ থাকতে হবে এবং অন্যকে ভালো থাকা ও সুস্থ থাকার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।

ইমরান হোসাইন

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০