ভালো নেই যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: ব্যস্ত সময় পার করলেও মন ভালো নেই ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর ফুলচাষিদের। নতুন বছর সামনে রেখে নানা জাতের ফুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকলেও উৎপাদন বেশি ও বাজারে চাহিদা কম হওয়ায় মন খারাপ তাদের। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল চাষে লাভবান হবেন বলে আশা করেছিলেন তারা। ইতোমধ্যে বিজয় দিবস কেন্দ্র করে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হলেও দাম কম হওয়ার কারণে আক্ষেপ করেছেন তারা।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের বহু চাষি আছেন যারা দীর্ঘদিন ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ফুলের বাজার ধরার চেষ্টা করছেন ফুলচাষিরা। 

গত শুক্রবার গদখালীর পানিসারায় গিয়ে দেখা যায় বিস্তীর্ণ মাঠে শুধু ফুল আর ফুল। করোনার টানা দুই বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠে সাধ্যমতো ফুল চাষ করেছেন গদখালীর ফুলচাষিরা। ইতোমধ্যে তাদের উৎপাদিত ফুলের কেনাবেচা ফের চাঙ্গা হয়ে উঠলেও দাম কমের কারণে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালের হাটে গদখালীতে এক হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। গত বছর একই সময় এক হাজার ফুল বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। ফুলের হাটে আসা কয়েকজন কৃষক ফুলের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় আক্ষেপ করেছেন।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের হাড়িয়া এলাকার ফুলচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, ‘গতবারের চেয়ে গাঁদা ফুলের দাম এবার অর্ধেকের চেয়েও কম। এ বছর উৎপাদন হয়েছে বেশি, বাজারে চাহিদা কম। বাজারে এসে তাই মন খারাপ হয়েছে।’

শহিদুলের মতো একই কথা বললেন হাড়িয়া উত্তরপাড়ার চাষি এনাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে গিয়ে ফুল বিক্রি করতে গিয়ে কান্না পাচ্ছিল।’

ফুলচাষিদের মতে, বেচাকেনা বেশি না হলে চাহিদা তেমন থাকে না। তাছাড়া এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাধ্যমতো ফুল চাষ করেছেন তারা। এবার ভালো ও বেশি ফুলও পেয়েছেন। কিন্তু দাম বেশ কম। সে কারণে, শ্রমিকদের মজুরি, সার-কীটনাশক, সেচের খরচ মিটিয়ে এমন দামে খুব বেশি একটা লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গদখালীর ফুলের হাটে ফুলের দাম ছিল বাসন্তী ও হলুদরাঙা গাঁদা যথাক্রমে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হাজার, ১০০ পিস গোলাপ ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস রংভেদে ৪ থেকে ১১ টাকা, ১০০ পিস চন্দ্রমল্লিকা (সাদা) ৭০ টাকা, হলুদ ১২০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১০ থেকে ১২ টাকা, ১০০ পিস রজনীগন্ধা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, জিপসি প্রতি বান্ডিল ২০ টাকা, রড স্টিক প্রতি বান্ডিল ১০ টাকা।

কৃষি বিভাগ বলছে, গাঁদা ফুলের দাম একটু কম হলেও কৃষকরা অন্যান্য ফুলের দাম ঠিকই পাচ্ছেন। অন্যান্য অনুষ্ঠানেও এবার উৎপাদিত ফুলের চাহিদা থাকবে। কৃষকরা এবার আগের চেয়ে বেশি ফুল বিক্রি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সারা বছরের মধ্যে কয়েকটি বিশেষ দিন সামনে রেখে এখানকার ফুলচাষিরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করে থাকেন। একেক অনুষ্ঠানে একেক ধরনের ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ব্যাপক হারে গাঁদা ফুলের চাষ করেন, উৎপাদনও হয়েছে খুব বেশি। আর উৎপাদন বেশি ও চাহিদা কম হওয়ায় দাম গতবারের তুলনায় বেশ কম। তবে এটি খারাপ কিছু না। দাম কম হওয়ায় ভোক্তারা অবশ্য অল্প দামে ভালো ফুলটা পাচ্ছেন। তবে সামনের দিনগুলোতেও কৃষক ভালো দাম পাবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, ফুলের উৎপাদন হলেও একশ্রেণির ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের ফুল সরবরাহ করে বিভিন্ন বড় বড় অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য দেশের ফুলচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এজন্য ফুলচাষিদের দাবি সরকার যেন এসব প্লাস্টিকের ফুল সরবরাহ বন্ধ করে কাঁচা ফুল ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করে।

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছার গদখালী, পানিসারা ছাড়াও জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে নানান জাতের ফুলের চাষ রয়েছে। এসব ফুল চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষককে নানাভাবে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলচাষিরা ভালো ফলন পাবেন এবং আগামী বিশেষ দিনগুলোয় ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০