কাজী সালমা সুলতানা :২৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এদিন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপের একটি একীভূত দল জাতীয় মিলিশিয়া গঠন করে। আশা ব্যক্ত করা হয়, এই মিলিশিয়া বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি, তাদের পেশাগত বিকাশের সুযোগ, সামাজিক সম্মান ও সুশৃঙ্খল বিকাশের মাধ্যমে জাতির অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করা সম্ভব। এখানে মুক্তিযোদ্ধারা নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এই মিলিশিয়ার নাম পরে রক্ষীবাহিনী হয়।
এদিন পুলিশ ডিরেক্টরেটের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর আরও বহু দোসরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন পিডিবির সহসভাপতি ও উপনির্বাচনের এমএনএ মওলানা মোসলেহ উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও ময়মনসিংহ জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ফখরুদ্দিন, সম্পাদক খোরশেদ আহমদ খান, কোষাধ্যক্ষ ডা. এ হামিদ, পিডিপির সভাপতি মওলানা আলতাফ হোসেন, নেজামে ইসলামের সভাপতি মওলানা ফয়জুর রহমান ও ডিএসপি ইসরাইল।
এদিকে হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার লন্ডন অফিসের সংবাদে প্রকাশ করা হয়, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি কনফেডারেশন গঠনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে রাওয়ালপিন্ডি নেয়া হয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য ভুট্টো চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানান। আরও বলা হয়, ২২টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে এরই মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
জাতীয় পরিষদ সদস্য ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি সামসুদ্দিন মোল্লা এক বিবৃতিতে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীর কুখ্যাত আলবদর, আলশামস ও রাজাকার কর্তৃক পরিচালিত ব্যাপক গণহত্যার বিচার করার উদ্দেশ্যে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসররা ঢাকার সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং প্রায় সবাই তাদের হাতে প্রাণ হারান।
শামসুদ্দিন আরও বলেন, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের এই অমানুষিক ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ফেরাউন, নমরুদ ও হিটলারের বর্ববতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সারাবিশ্ব এসব প্রতিভাবান ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েছে। সোনার বাংলার বুদ্ধিজীবী সমাজকে নির্মূল করাই ছিল দখলদার বাহিনীর সর্বশেষ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য। তাদের পৈশাচিক অভিযানের শিকারে পরিণত হয়েছে ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন, দৈনিক সংবাদের শহীদুল্লাহ কায়সার, পিপিআইয়ের নিজামুদ্দিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী এবং আরও অনেকে।
এদিন জেনারেল উবান সিংকে নিয়ে বিশেষ হেলিকপ্টারে করে ঢাকা পৌঁছান শেখ মনি। মুজিব বাহিনীর অঘোষিত প্রধান জেনারেল উবানের সঙ্গে ছিলেন কর্নেল পুরকায়স্থ। তাদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে মুজিব বাহিনীর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হন। বিমানবন্দরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলার সাড়ে সাত কোটি যোদ্ধা যে কোনো মূল্যে বঙ্গবন্ধুকে হানাদারদের হাত থেকে ছিনিয়ে আনবে। তিনি বিশ্বনেতাদের অবিলম্বে বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মূলধারা ৭১