আমীর খসরুসহ পাঁচজনের নামে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্লট জালিয়াতি ও নকশাবহির্ভূতভাবে হোটেল সারিনা নির্মাণের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর স্ত্রী তাহেরা খসরু আলম, শ্যালিকা সাবেরা সরোয়ার নীনা ও তার স্বামী গোলাম সরোয়ার এবং রাজউকের নকশা অনুমোদন শাখার বিল্ডিং ইন্সপেক্টর আওরঙ্গজেব নান্নু।

সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানাধীন ঢাকার বনানী এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটটি ডেভেলপ করার নামে ২২ তলা ভবন নির্মাণ করে অধিকাংশ ফ্লোর আত্মসাৎ করেছেন। ফ্লোরগুলো বিক্রির মাধ্যমে তিন কোটি ২৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। তবে রাজস্ব ফাঁকি দিতে হোটেল সারিনা ইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক দলিলে এক কোটি ৭৪ লাখ টাকা কম মূল্য লেখা হয়েছে। রাজউকের নকশাবহির্ভূতভাবে ওই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পাশের ২৫ নম্বর প্লটেও নকশাবহির্ভূতভাবে ২১ তলাবিশিষ্ট হোটেল সারিনা নির্মাণ করেছেন তারা। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলমের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তারা উভয়েই বনানী এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ ও ২৫ নম্বর প্লটে অবস্থিত পাঁচতারকা হোটেল সারিনা ইন লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার। জব্দ করা আলামত এবং সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিযুক্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলম হোটেল সারিনার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি গোপন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ভায়রা ভাই গোলাম সরোয়ার এবং শ্যালিকা সাবেরা সরোয়ার নীনার সঙ্গে আমীর খসরু ও তার স্ত্রীও হোটেল সারিনা ইন লিমিটেডের মালিক।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় রাজউকের কাছ থেকে বনানী বাণিজ্যিক এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটটি নিলামে ক্রয় করে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। ১৯৯৯ সালে নিয়মবহির্ভূতভাবে একটি বেজমেন্ট ও চারটি ফ্লোর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে দেয়ার শর্তে ডেভেলপার ও আপন ভায়রা ভাই গোলাম সরোয়ারকে ওই প্লট দেয়া হয় ভবন নির্মাণের জন্য। যখন গোলাম সরোয়ারের মালিকানাধীন ডেভেলপারকে নিয়োগ দেয়া হয়, তখন প্রতিষ্ঠানটি অনিবন্ধিত ছিল। এরপর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তাহেরা খসরু আলম, গোলাম সরোয়ার ও সাবেরা সরোয়ার নীনা পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত না মেনে ২২ তলা ভবন নির্মাণ করেন। এরপর চারটি বাদে বাকি সব ফ্লোর নিজস্ব মালিকানায় নিয়ে আত্মসাৎ করেন তারা।

এছাড়া আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার ভায়রা গোলাম সরোয়ার বনানীর ১৭ নম্বর রোডে বসতি টাওয়ার নামে পরিচিত ২৫ নম্বর প্লটটিও যৌথ নামে ক্রয় করেন। রাজউক সেখানে ১৫ তলা নকশার অনুমতি দিলেও তারা ২১ তলা ভবন নির্মাণ করেন।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রথম প্রেসিডেন্ট, সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পরিকল্পিতভাবে নানা কৌশলে প্রথমে নিজের ভায়রাকে ওই প্রতিষ্ঠানের (সিএসই) বর্ণিত ২৭ নম্বর প্লটের ডেভেলপার নিযুক্ত করেন। পরে সেখানে স্ত্রীসহ নিজে যুক্ত হয়ে প্লটটি আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০