শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেয়ার ১০ বছর পর ক্রোয়েশিয়া গত রোববার দুটি মাইলফলক অর্জন করেছে। দেশটি মুদ্রা হিসেবে ইউরো চালু করেছে এবং পাসপোর্ট ছাড়া ইউরোপ অঞ্চলে প্রবেশের অধিকার পেয়েছে। খবর: এএফপি।
স্থানীয় সময় গত শনিবার রাত ১১টায় বলকান দেশটি তাদের মুদ্রা ‘কুনা’কে বিদায় জানায় এবং ইউরো বেছে নেয়। এর মধ্য দিয়ে ইউরো অঞ্চলের ২০তম সদস্য হয় ক্রোয়েশিয়া। অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম দিন শেনঝেনভুক্ত দেশগুলোর একটি হয় ক্রোয়েশিয়া। ২৭তম দেশ হিসেবে শেনঝেনের সদস্য হয় এ দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ পাসপোর্ট-ফ্রি অঞ্চল এটি। এখানকার প্রায় ৪০ কোটি মানুষ পাসপোর্ট ছাড়াই সদস্য দেশগুলোয় প্রবেশাধিকার পান।
এ ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েন শিগগির ক্রোয়েশিয়ায় সফরে যাবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ কারণে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। এমন সময়ে ইউরো গ্রহণ করা ক্রোয়েশিয়ার অর্থনীতিকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
তবে এ বিষয়ে ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। সীমান্তের নিয়মকানুন উঠে যাওয়ায় তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে ইউরো গ্রহণ করায় তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ডানপন্থি বিরোধী গোষ্ঠীগুলো বলছে, ইউরোর কারণে শুধু জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোই শুধু উপকৃত হবে।
জাগরেবের ৬৩ বছর বয়সী পেনশন সুবিধাভোগী ড্রাজেন গোলেম্যাক বলেন, আমরা কুনাকে হারাচ্ছি; এর অভাবে সবকিছুর দাম বাড়বে। তার মতো অনেক ক্রোয়েশিয়ান একই ধারণা করছে। তাদের মতে, ইউরোর প্রচলন শুরু হওয়ায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে, বিশেষ করে মুদ্রা কনভার্ট (এক্সচেঞ্জ বা বিনিময়) করার ফলে ব্যবসায় খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের।
টুরিস্ট এজেন্সির কর্মী মার্কো পেভিক বলেন, ক্রোয়েশিয়া অভিজাত ক্লাবে যোগ দিয়েছে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের কাছে ইউরো নতুন কিছু নয়, তবে শেনঝেন অঞ্চলে প্রবেশ আমাদের দেশের জন্য দুর্দান্ত খবর।
ইতোমধ্যে ক্রোয়েশিয়াজুড়ে ইউরোর ব্যবহার শুরু হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রা কুনার ওপর আস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে অনেক নাগরিক ইউরো দিয়ে গাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনছেন। ব্যাংক আমানতের ৮০ শতাংশ ইউরোয় সংরক্ষিত হচ্ছে এবং জাগরেবের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদাররা ইউরোজোনে রয়েছে। ক্রোয়েশিয়ান ন্যাশনাল ব্যাংকের (এইচএনবি) অ্যানা সাবিক বলেন, ইউরোর কারণে আমাদের অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে ও নিরাপদ থাকবে।
ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেনকোভিসসহ কর্মকর্তারা বলেন, সদস্য হওয়ার ফলে ইইউ’র দুটি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ইউরো গ্রহণের ফলে ঋণ নেয়ার শর্ত শিথিল হবে।
সাবেক যুগোশ্লোভিয়া প্রজাতন্ত্র থেকে ১৯৯০ সালে স্বাধীন হয় ক্রোয়েশিয়া। তখন দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৩৯ লাখ। ২০১৩ সালে দেশটির ইইউ’র সদস্য হয়। গত বছরের নভেম্বরে ক্রোয়েশিয়ার মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, একই সময়ে ইউরো অঞ্চলে যা ছিল ১০ শতাংশ। ইউরোজোনের বাইরে থাকা পোল্যান্ড কিংবা হাঙ্গেরিও মূল্যস্ফীতির কারণে ভুগেছে।
জাতীয় মুদ্রা কুনা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় যেসব ক্রোয়েশিয়ান বিলাপ করছে, তাদের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের গভর্নর বরিস ভুজসিস বলেন, কুনা তার কাছেও বিশেষ আবেগের। তবে অর্থনীতির স্বার্থে কুনার বিলোপ দরকার ছিল বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ায় ১৯৯৪ সালে কুনার প্রচলন শুরু হয়।
ওদিকে সীমান্ত উম্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় হাঙ্গেরি ও স্লোভেনিয়া সীমান্তে জড়ো হয় ক্রোয়েশিয়ান। তারা পাসপোর্ট ছাড়া এ দুই দেশে প্রবেশ করে এবং খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন করে। হাঙ্গেরি সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গর্ডান রিøক-রাদমান। সেøাভেনিয়ার সীমান্তে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভর বোজিনোভিস ও সেøাভেনিয়ার জনপ্রশাসনমন্ত্রী সানজা আজানোভিস হভনিক। এ সময় বোজিনোভিস উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, আজ (গত রোববার) আমরা ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে নতুন ইউরোপে নতুন বছর উদযাপন করছি। এটি আমাদের ইউরোপীয় পরিচয়ের চূড়ান্ত স্বীকৃতি।
