নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে সম্প্রতি চার মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আলমগীরের দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে পূনার্ঙ্গ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির ফান্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে ২৩টি তথ্য চেয়েছে কমিশন। যা আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালি ইনভেস্টমেন্টের সিইওর কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসির চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- ইউএফএসের ব্যবস্থাপনার ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডের পূর্বের ও বর্তমানের সব আর্থিক প্রতিবেদন, ফান্ড দুটির সব ব্যাংক স্টেটমেন্টের তথ্য, ফান্ড দুটিতে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও তাদের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট, ফান্ডগুলোর গ্রাহক ও তাদের টাকার পরিমাণের তথ্য, ফান্ড দুটিতে বিনিয়োগ কমিটির সদস্যদের তালিকা ইত্যাদি।
সেই সঙ্গে ফান্ড দুটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে সেগুলো ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ জমা দিতে বলা হয়েছে। ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে থাকা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার বিষয়ে জারতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ফান্ডদুটির বিনিয়োগের অবস্থা এবং নির্দিষ্ট সীমার বিষয়ে প্রকাশ করা তথ্য, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ফান্ডদুটির বিনিয়োগের বিষয়ে ট্রাস্টি থেকে প্রাপ্ত কনসেন্ট লেটার, ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্য ও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থপনা ফি এবং সংশ্লিষ্ট সব তথ্য কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনে এসব তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) ও তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ১৫ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা জব্দ করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হচ্ছে বিএফআইইউ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠানো চিঠিতে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনসহ ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা ও টিআইএন নম্বর (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেওয়া হয়েছে।
এগুলো হলো- ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেড। চিঠিতে তাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে প্যারামাউন্ট হাইটস, লেভেল-১১, ৬৫/২/১, বক্স কালভার্ট রোড, পুরানা পল্টন, ঢাকা। এছাড়া নাম রয়েছে ইশরাত আলমগীর ও সৈয়দা মেহরীন রহমানের, তাদের ঠিকানা দেওয়া আছে এপার্টমেন্ট-৩০১, বাড়ি-১৬, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা। একই ঠিকানায় নাম রয়েছে সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের এপার্টমেন্ট-ডি ৫, বাড়ি ৩২, রোড-৫, ধানমন্ডি, ঢাকা। ইউএফএসের এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর ও মাহিদ হক। তাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে এপার্টমেন্ট-১০৩, বাড়ি ১৮, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা।
চিঠিতে নাম রয়েছে তারেক মাসুদ খানের, তার ঠিকানা বাড়ি-৩০১, রোড-১৯/বি, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা। মোহাম্মাদ জাকির হোসেনের ঠিকানা ৫৩৫, পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানার ঠিকানা বাড়ি-১৩, রোড-১, ব্লক-আই, বনানী, ঢাকা।
হিসাব স্থগিত রাখার তালিকায় আরও আছে ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড ৩৮, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড। এরআগে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসি ও আইসিবিকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে।