ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্য সেন ও তার অন্যতম সহযোগী তারকেশ্বর দস্তিদারের ৮৮তম মৃত্যু দিবস আজ। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। মৃত্যুর পর ব্রিটিশ শাসকেরা তাদের মৃতদেহে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়। সুর্যসেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাস্টারদার পুরো নাম সূর্য কুমার সেন। ১৯১৬ সালে বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালে তিনি সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে এসে যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। সূর্যসেন রাজনীতির কারণে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ‘ন্যাশনাল স্কুল’-এ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার কারণে তিনি ‘মাস্টার দা’ উপাধি পান। তারই নেতৃত্বে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও সশস্ত্র বিদ্রোহ ছিল সংঘটিত হয়। বিপ্লবীরা সেদিন দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারা কুচকাওয়াজ করে সূর্য সেনকে সংবর্ধনা দেয়। সূর্য সেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। সেদিন থেকে চার দিন চট্টগ্রাম সম্পূর্ণ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত ছিল। তবে এ ঘটনায় ইংরেজ সরকার সূর্য সেনকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সূর্য সেনের সহযোগী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ চালান, তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়লে দ্রুত সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার পরে মাস্টারদা আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাস্টারদা, তারকেশ্বর দস্তিদার ও কল্পনা দত্ত ধরা পড়েন। পরে বিশেষ আদালতে তাদের বিচার হয়। রায়ে সূর্য সেন ও তারেকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির রায় হয় এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে কারাগারের ভেতরে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মমভাবে অত্যাচার করে। পরে তাদের অর্ধমৃত দেহ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। দিনটি ছিল ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি। ফাঁসির পর তাদের মৃতদেহ স্বজনদের না দিয়ে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
কাজী সালমা সুলতানা