সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে বেশি গভীরতার জাহাজ পণ্য নিয়ে প্রবেশ করতে পারত না। বন্দরে প্রবেশের আগে বহির্নোঙরে কুতুবদিয়ায় কিছু পণ্য খালাস করার পর জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করানো হতো। সাম্প্রতিক সময়ে কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে পশ্চিমে খননকাজের পর প্রশস্ত ও গভীরতা (ড্রাফট) বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বিদ্যমান ড্রাফটের চেয়ে বড়ো জাহাজ প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আজ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৩৭ মিটার লম্বা ও সাত মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দেয়া হতো। গত শতকের সত্তরের দশকে চ্যানেল সংস্কারের পর ১৯৭৫ সালে এ বন্দরে মাত্র সাড়ে সাত মিটার গভীর ও ১৬০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৮০ সালে আট মিটার গভীর ও ১৭০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯০ সালে সাড়ে আট মিটার গভীর ও ১৮০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯৫ সালে ৯ মিটার গভীর ও ১৮৫ মিটার দীর্ঘ এবং ২০১৪ সালে সাড়ে ৯ মিটার গভীর ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান কয়েকটি জেটিতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার গভীর এবং ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ পায়। এ ধরনের জাহাজে মাত্র এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ কনটেইনার বহনের সুযোগ থাকে।
বড় ড্রাফটের জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে এসে কার্গো খালাসের অপেক্ষায় থাকতে হতো। লাইটারেজ জাহাজ গিয়ে পণ্য খালাস করে জেটিতে আনার পর আবার সেই পণ্য খালাস করতে হয়। রপ্তানি পণ্যও একই পদ্ধতিতে জাহাজীকরণ করতে হয়। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি-মাটি অপসারণ করে গভীরতা বাড়ানো হয়। জেটিসহ বন্দর এলাকায় পানির স্বাভাবিক গভীরতা এবং জোয়ারের উচ্চতা হিসাব করে এবার ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বন্দর কতর্মকর্তারা বলেন, জাহাজ ভেড়ানোর বিষয়ে সমীক্ষা চালানোর জন্য ‘এইচআর ওয়েলিংফোর্ড’ নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সংস্থাটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব। তবে বন্দরের ১৮ জেটির সবগুলোয় একই ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে না। জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এতে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়লে প্রতিটিতে আরও এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ কনটেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। এতে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে, কমবে কনটেইনারে করে আনা-নেয়া করা পণ্যের পরিবহন ব্যয়। এছাড়া ছোট আকৃতির প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্য খালাস বন্ধ করে জাহাজগুলোকে আর বহির্নোঙরে অলস বসে থাকতে হবে না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরের ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ালে এখনকার চেয়ে বেশি কার্গো পরিবহন করা যাবে। বন্দরের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম কমে আসবে। এতে বন্দর ব্যবহারকারীরা উপকৃত হবে। তাদের ব্যবসায়িক ব্যয় কমবে। আর ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর পর আমরা বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানির কাছে সার্কুলার পাঠাব।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে ২০২১-২২ অর্থবছরে চার হাজার ২৩১টি পণ্যবাহী জাহাজ আসে। এসব জাহাজে ৩২ লাখ কনটেইনার ও ১১ কোটি মেট্রিক টন কার্গো পণ্য এসেছিল।