তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: দেশের উত্তর অঞ্চলের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নীলফামারীর ছয় উপজেলা ঘন কুয়াশা ও কন কনে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বেড়েছে শীতজনিত নানা রোগবালাই। গত দুই দিন ধরে বেড়েছে ঠাণ্ডার তীব্রতা। সকাল গড়িয়ে দুপুরে মিলছে সূর্যের দেখা। এদিকে শীতের তীব্রতায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে ১০ জন শিশু ও একজন বয়স্ক। এর মধ্যে দুপুরে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শিশু ওয়ার্ডে ১৩ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে। এ নিয়ে দুই ওয়ার্ডে মোট শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ জন।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম রসুল রাখি জানান, অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। অপরদিকে, তীব্র শীতে বয়স্ক রোগীদের (অ্যাজমা) শ্বাস কস্টের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিন আন্তঃবিভাগে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া বহিঃবিভাগে ৮৫৮ জন চিাকৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছে।
হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের রোগী মোজাম্মেল হক (৫৫) বলেন, শ্বাস কষ্টজনিত রোগে গত দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আমিও চলে যাব। ভালো চিকিৎসার কথা বললেই রংপুর হাসপাতালে যেতে বলে ডাক্তাররা। টাকা পয়সা না থাকায় বাদ্য হয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আউয়াল বলেন, কনকনে ঠাণ্ডায় শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমাসহ এই জাতীয় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতজনিত রোগ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে এসে বিশেষজ্ঞ চিকিসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রিকশা বা ভ্যান নিয়ে শহরে যেতে পারছে না পেশাজীবীরা। অন্যদিকে, তিস্তার চর অঞ্চল এলাকায় বেশি ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ায় এলাকার মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। তীব্র শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে গবাদি-পশুপাখির।
শনিবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও জেলার ডিমলায় সর্বনিন্ম ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি বয়ে যাচ্ছে ঠাণ্ডা বাতাস। শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আবু আল হাজ্জাজ বলেন, শিশু কিংবা বয়স্কদের যেকোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সব সময় গরম পানি, গরম খাবার, বিশ্রাম ও নিরাপদে থাকতে হবে। এ ছাড়াও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ধুলাবালি মিশ্রিত আবহাওয়া, ঠাণ্ডা লাগা এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।