প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী সহিদ হোসেনকে (৪৫) শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্ত্রী আমেনা বেগমকে (৩৮) ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদলত। একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আমেনা বেগম রায়পুরের বামনী ইউনিয়নের বামনী গ্রামের মৃত মমিনুল হকের মেয়ে। তার স্বামী সহিদ হোসেন একই এলাকার আবদুল করিম হাজী বাড়ির মৃত চান মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, সহিদ জীবিত থাকা অবস্থায় তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। তার মৃত্যুর সময় স্ত্রী আমেনা তিন মাসের গর্ভবতী ছিলেন। পরে আমেনা একটি কন্যাসন্তানের জš§ দেন। রায় ঘোষণার পর ১৬ মাস বয়সী শিশু ফাতেমা আক্তার মারিয়াকে নিয়েই আদালতের লকারে যেতে হয়েছে দণ্ডপ্রাপ্ত আমেনাকে। রায় ঘোষণার সময় তিনি শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জামিনে বাইরে ছিলেন তিনি।
এজাহার সূত্র জানায়, জীবিকার তাগিদে সহিদ জীবনের দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রবাস জীবন ছেড়ে তিনি দেশে চলে আসেন। এর পর থেকে আমেনার সঙ্গে তার পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়। ২০২১ সালের ২২ মার্চ রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে আমেনার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘরে ঢুকে সহিদকে মৃত দেখতে পান। পরে স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গোসল করানোর সময় শরীরে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। খবর পেয়ে পরদিন পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল প্রাপ্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সহিদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। পারিবারিক কলহের জের ধরে মুখ চেপে ধরে আমেনা সহিদকে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় ২৯ এপ্রিল নিহত সহিদের ভাই আবদুল আলী খোকন (৫১) বাদী হয়ে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে তার ভাবী আমেনা বেগমকে আসামি করা হয়। পরে ২৩ মে আমেনা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াছির আরাফাত।
দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আমেনার বিরুদ্ধে রায় দেন। জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।