নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে হুবহু অনুবাদ করে তুলে দেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বইটি রচনা ও সম্পাদনায় যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।
তাদের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ‘ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি।’
সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের রচয়িতা হিসেবে নাম আছে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. হাসিনা খান, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব ও রনি বসাকের। সম্পাদক হিসেবে নাম রয়েছে অধ্যাপক জাফর ইকবালের।
লেখক হিসেবে খ্যাতিমান জাফর ইকবাল একজন পদার্থবিদ; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপনার পর অবসর নেন তিনি। প্রাণরসায়ন বিজ্ঞানী ও জিনতত্ত্ববিদ হাসিনা খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের জিনোম সিক্যুয়েন্স আবিষ্কৃত হয়।
তাদের রচিত ও সম্পাদিত পাঠ্যবই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা সমালোচনা আসছিল। এর মধ্যে নাদিম মাহমুদ নামে একজন কলামিস্ট দেখান যে, বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে বিভিন্ন অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে এই অনুবাদে ব্যবহার হয়েছে গুগল ট্রান্সলেট।
তা দেখে গতকাল জাফর ইকবাল ও হাসিনা খানের পাঠানো ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, হুবহু অনুবাদের অভিযোগ তুলে লেখা কলামটি তাদের নজরে এসেছে।
‘অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বইয়ের কোনো কোনো অধ্যায়ের অংশবিশেষ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করা হয়েছে। বইয়ের এই নির্দিষ্ট অংশটুকু এবং ওয়েবসাইটটির একই লেখাটুকু তুলনা করে অভিযোগটি আমাদের কাছে সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।’
বইয়ের ওই অংশটুকু রচনায় তারা যুক্ত ছিলেন না দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একই পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফল হিসেবে বইটি প্রকাশিত হয়। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এসব লেখকের কাছ থেকেই একধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশার এবং মন খারাপের কারণ হয়।’
‘ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি।’
বইয়ের পরবর্তী সংস্করণে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে বলে আশ্বস্ত করে জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান বলেছেন, এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে।
‘কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যেকোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে।’