সরকারের নির্বাহী আদেশে এবার বাড়ল গ্যাসের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের পর এবার বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। গতকাল বুধবার দুপুরে দাম বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ‘বিল মাস’ ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হবে। তবে আবাসিক, সিএনজি ও চা-শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়েনি, এসব খাতে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে। দাম বেড়েছে বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্পকারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে) খাতে গ্যাস প্রতি ঘনমিটারে দাম ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগে প্রতি ঘনমিটারের দাম ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রজ্ঞাপনে আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার দাম আগের মতোই ৯৯০ টাকাই রাখা হয়েছে। একইভাবে দুই চুলার দাম ১০৮০ টাকাই আছে। সিএনজিতেও প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং চা-শিল্পের গ্যাসের দামও আগের মতো প্রতি ঘনমিটার ১১ টাকা ৯৩ পয়সাই আছে। একই সঙ্গে সার কারখানায় ব্যবহƒত গ্যাসের দামও আগের মতোই আছে। জরুরি এই খাতে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম আগের মতো ১৬ টাকাই রাখা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার সিএনজি মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা ও অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এদিকে গৃহস্থালি ছাড়া অন্যান্য গ্রাহকশ্রেণি যেমন বিদ্যুৎ (সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র), ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্মল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্র), সার, শিল্প, চা-শিল্প (চা-বাগান), বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) এবং সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে (মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে) ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় জনজীবনে সরাসরি প্রভাব না পড়লেও পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে। এদিকে সরকার বলছে, এই দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের ভর্তুকি কমবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি কিনতে গিয়ে পেট্রোবাংলা আর্থিক সংকটে রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। আইএমএফ ঋণ ছাড়ের আগেই ভর্তুকি কমানোর শর্ত দিয়েছিল। সরকার ভর্তুকি কমাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভোক্তা পর্যায়ে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল গত বছরের ৪ জুন। এর আগে ২০১৮ সালের শেষভাগে এলএনজি আমদানির সময় থেকে সরকারের খরচ বাড়তে শুরু করে এবং তখন এই ঘাটতি পূরণ করতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

বিইআরসি গণশুনানি করে গ্যাসের দাম বাড়ালেও এবারই প্রথম সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো হলো। এত দিন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বিইআরসি একাই। গত ১০ জানুয়ারি বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ এবং সমন্বয়ে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ রেখে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০২৩’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর পরপরই গত ১৩ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ। আর আজ (বুধবার)  ১৮ জানুয়ারি বাড়ল গ্যাসের দাম।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। গত ১ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ অধ্যাদেশ বলে বিইআরসির পাশাপাশি সরকার চাইলেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়াতে বা কমাতে পারবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে সেখানে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা শিরোনামে নতুন একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০