মানসিক সুস্থতায় বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রয়োজন

স্বাস্থ্যই সুখের মূল। মন আর শরীর একটি আর একটির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মন ও শরীরের সম্পর্ক নিবিড় এবং একে অপরের পরিপূরক। অসুস্থ শরীরের অসুস্থ মনের বাস, তেমনি মন অসুস্থ হলে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা শারীরিক অসুস্থতাকে যতটা গুরুত্ব দিই মানসিক অসুস্থতার তত গুরুত্ব দিই না।  এ কারণে আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের অন্যায়,  অনৈতিক কাজে মানুষ লিপ্ত হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে কতশত জীবন। এই মানসিক অসুস্থতাকে অবহেলার কারণে প্রতিদিন কত মানুষ মৃত্যুর পথ বেচে নিচ্ছে। আধুনিকতার এই যুগে এসে মানুষ যন্ত্রনির্ভর হয়ে একাকিত্ব ভুগছে। আমরা এখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি; ফলে পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো  মানসিকতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এভাবে একাকিত্বে ভুগছেন মানুষ। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন অনুসারে, মানসিক সুস্থতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছেÑ‘একটি ভালোর একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি তার নিজস্ব দক্ষতা উপলব্ধি করে, জীবনের স্বাভাবিক চাপকে মোকাবিলা করতে পারে, উৎপাদনশীল এবং ফলদায়কভাবে কাজ করতে পারে এবং একটি সক্ষম করতে সক্ষম হয় তার বা তার সম্প্রদায়ের অবদান।   কিন্তু বর্তমানে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ বেশি হয়ে যাচ্ছি। কারণ বেকারত্ব,  অভাব-অনটন,  অসচেতনতা, নিঃসঙ্গতা, পারিবারিক সমস্যা,   পারিপার্শ্বিক অবস্থা, প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশা, অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার ইত্যাদি। বর্তমানে তরুণ সমাজের অনেকটা অংশ এই মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন কিন্তু সেই মানসিক অসুস্থতার সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেকে বিপথগামী হচ্ছে। আমরা আমাদের আশপাশে লক্ষ্য করলেই অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি শারীরিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (হাসপাতাল, ক্লিনিক)  দেখতে পাই কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চোখে পড়ে না বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী জিন টুয়েনজ ও তার সহকর্মীরা যৌথভাবে নতুন একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করে। বর্তমানে তরুণদের মধ্যে অধিক পরিমাণে হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ হতাশ হলে ঠুনকো কারণে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তখন তিনি নিজেকে একা মনে করে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে অন্যদের কাছে মৃত্যুর কারণ ছোট মনে হলেও ওই কারণ ওই মুহূর্তে ওই ব্যক্তির জন্য অনেক বড় কারণ হয়ে সামনে আসে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আজহারুল ইসলাম বলেন, বিষণœতা থেকেই মূলত মানুষ আত্মহত্যা করে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থেকে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক এক জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশই জানিয়েছেন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন, যেমন মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি বিষয় শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরও গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকের বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরি রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, তরুণ প্রজš§ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হারে আত্মহত্যা বাড়ছে, সে হারে সচেতনতা বাড়ছে না।

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর সঙ্গে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, ক্রাইসিস সেন্টার ও হটলাইন চালু করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ করা প্রমুখ। পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা এবং সঠিক চিকিৎসা ও সেবার ব্যবস্থা করা।

কণিকা রানী

শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০