যমুনার ভাঙনে হুমকিতে ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: একদিকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে শীতের প্রকোপ, আরেক দিকে অসময়ে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন। এতে ভাঙনের কবলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই থেকে চরসলিমাবাদ ভূতের মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ভাঙনের কবলে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাজার ও ৫০টি বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। এখনও হুমকির মুখে রয়েছে- বিনাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সম্ভূদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সম্ভূদিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, পয়লা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, চৌবারিয়া বি.এম কলেজ, বাঘুটিয়া কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও এখনও দেখা মেলেনি স্থায়ী বাঁধের। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চৌহালী নদীভাঙনের কবলে থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় গৃহহীন অনেক মানুষই চৌহালী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দ্রুত স্থায়ী সমাধান না হলে আবারও গৃহহীন হয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষ।

সম্ভুদিয়া এলাকার রহিম শেখ বলেন, ১ বিঘা জমিতে বাদাম রোপণ করেছিলাম। ভাঙনে ফসল নষ্ট হয়েছে। হালের খরচও ওঠাতে পারিনি। এতে আমার ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বিনাইন গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে বাড়িঘর রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে এ এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে এলাকার মানুষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেত।

বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে বিনানই থেকে চরসলিমাবাদ এলাকা পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙন দেখা দিলে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে আবারও এখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনও কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে প্রায় ৫শ মিটার দূরেই রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এভাবে আর কয়েকদিন চলতে থাকলে প্রায় ৫ থেকে ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমি ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সবাইকে অবগত করেছি।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, চৌহালীর কিছু জায়গায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু শুকনো মৌসুমের কারণে ভাঙন রোধে এখন কোনো বরাদ্দ না থাকায় আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে বর্ষা মৌসুমের আগেই বরাদ্দ পেলে তখন ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।

তিনি আরও জানান, নদীভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিঠির মাধ্যমে অবগত করার পরে সেখানে লোক পাঠিয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, চৌহালীতে নদীভাঙনের কথা শুনেছি এবং খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। আমরা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।

জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যেই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য নতুন পরিকল্পনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়ছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০