ইসমাইল আলী: ডলার সংকট কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না ব্যাংক খাত। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংকের অবস্থা বেশি শোচনীয়। সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত খাত চাল, গম, সার আমদানিতেই চাহিদামতো ডলার জোগান দিতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত সর্ববৃহৎ এ ব্যাংকটি। ফলে এসব পণ্য আমদানি এখনও আটকে আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে ১১৭ মিলিয়ন ডলার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সর্ববৃহৎ ব্যাংকটি। গত ১৭ জানুয়ারি এ চিঠি দেয়া হয়, যার প্রতিলিপি শেয়ার বিজের কাছে এসে পৌঁছেছে। এতে পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ডলার চাহিদার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৭ জানুয়ারি রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও সোয়াপ (ক্রয়-বিক্রয়) মিলিয়ে সোনালী ব্যাংকের কাছে ডলার মজুত ছিল ১১.২৩৭ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ব্যাংকটির নস্ট্র হিসাবে রয়েছে আরও ব্যবহারযোগ্য ১.১৭১ মিলিয়ন ডলার। চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন উৎস থেকে ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে তারা। তাই চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ১১৭ মিলিয়ন ডলার সরবরাহ করতে বলা হয়।
চিঠিটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৭ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংকের চাহিদার মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের চাল আমদানিতে দরকার ছিল দুটি বিলে ১৪.৭৭ মিলিয়ন ডলার। দুটি বিলই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একবার করে ডেফার্ড (বিলম্বিত) হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের গম আমদানিতে আরও দরকার ১.৮৯২ মিলিয়ন ডলার। বিসিআইসির (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন) সার আমদানিতে দুটি বিলে দরকার ১৮.০৫৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে একটি বিল তিনবার ডেফার্ড করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানিতে একটি বিলে ৭৪.৯৭ মিলিয়ন ডলার দরকার। এ বিলটি ২১ বার ডেফার্ড করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত নভেম্বর থেকে এ বিলটির জন্য অর্থ চেয়ে আসছে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু তাদের আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বাবদ বকেয়া পড়েছে ৭.৬৫ মিলিয়ন ডলার। এ বিলটিও তিনবার ডেফার্ড করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে বকেয়া পেমেন্টের বিস্তারিত তুলে ধরেছে সোনালী ব্যাংক। এতে দেখানো হয়েছে, সার আমদানির একটি বিলে ১৭.১০৫ মিলিয়ন ডলার বকেয়া, যার পুরোটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছে। তবে অপর বিলে বকেয়া ১.২১২ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে চাওয়া হয়েছে ০.৯৩২ মিলিয়ন ডলার। চাল আমদানির একটি বিল বকেয়া রয়েছে ৭৮.৭৮২ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ১৩.৫৬২ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। চাল আমদানির অপর বিলে বকেয়া ১৯.২১৬ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চাওয়া হয়েছে ১.২০৮ মিলিয়ন ডলার। আর গম, কয়লা ও বিদ্যুৎ আমদানির বিলের পুরো বকেয়াই একেবারে চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৭ জানুয়ারি ডলার চেয়ে চিঠি দিলেও প্রয়োজনীয় ডলার ছাড় করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই এখনও কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক।
যদিও গত সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, নিত্যপণ্যের আমদানিতে এলসি খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে। রমজানে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে এ দাবি সঠিক নয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা রমজানের নিত্যপণ্যের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরেও এলসি খুলতে না পেরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো হয়েছে একাধিকবার। তবে বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি।