ঠাকুরগাঁওয়ে ভুট্টা চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষক

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: বাজারে প্রচুর চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের জেলাগুলোয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টা চাষ। তবে গতবার ভুট্টার ভালো দাম পেয়ে এবারও ভুট্টা আবাদে আশার আলো দেখছেন কৃষক।

বর্তমান সময়ে ভুট্টাক্ষেতে সেচ ও ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভুট্টার ভালো ফলন আশা করছেন কৃষকরা। এই রবি মৌসুমে কৃষকরা অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকছেন। বেশি উঁচু-নিচু নয়, এমন জমিতে আগে শোভা পেত ক্রাউন, তিসি, ধেমসি, মরিচ, কচুসহ অন্যান্য আবাদ। এখন এসব আবাদ বাদ দিয়ে কৃষক ভুট্টা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ের জেলায় এবার এখন পর্যন্ত মোট ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে এবং মৌসুমে এ আবাদ চলমান রয়েছে।

প্রতি হেক্টর জমিতে খরচ হয়েছ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টর জমিতে ৮ দশমিক ৬ মেট্রিক টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প খরচে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হওয়ায় কৃষক গম কাটার পরে খরিপ মৌসুমে ভুট্টা লাগাতে বেশ ঝুঁকছেন। উচ্চ ফলনশীল ভুট্টার মধ্যে রয়েছে পাইনিয়ার ৩৩৫৫, এনএইচ ৭৭২০, এনকে ৯৪০ ও সুপার সাইন ২৭৪০।

ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. হবিবর রহমান হোসেন বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তিন বিঘা জমিতে মৌসুমি পাইয়নিয়ার ৩৩৫৫ উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা আবাদ করছি। বর্তমানে ভুট্টার ক্ষেতে সেচ দিচ্ছি। গতবার ভুট্টার ভালো দাম ছিল। এতে আমরা লাভবান হয়েছি। এবার বেশ ভালো হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং বাজারে দাম ভালো থাকলে লাভবান হব বলে আশা করছি।

আখানগর গ্রামের কৃষক মো. বদিরুল ইসলাম বলেন, তিন একর জমিতে এবার ভুট্টা আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমি এনএইচ৭৭২০ উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা আবাদ করছি। প্রতি বিঘায় আট হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। এখন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত আছি। ভুট্টা ক্ষেত বেশ ভালো হয়েছে। আশা করি লাভবান হব।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া ভুট্টা চাষের অনুকূলে থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গমের তুলনায় ভুট্টা ও মরিচের দামও বেশি হওয়ায় এ ফসল দুটির চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষক। দেশে আমিষের চাহিদা বেশি থাকায় ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় হাঁস, মুরগি ও গবাদি পশুর খামার। বৃহৎ কোম্পানিগুলো ছাড়াও স্থানীয়রা গড়ে তুলছেন এসব খামার। খামারের প্রধান খাদ্য হলো ফিড। বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ফিড

মিল। এসব ফিড মিল সারাবছর প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা ক্রয় করেন। গম ও ভুট্টা থেকে আটা, ময়দা, বিস্কুট ও পাউরুটিও হয়। দেশীয় বাজারে ভুট্টার বেশ চাহিদা থাকে। এর ফলে এ কৃষক এ ফসলটি চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেনের মতে, ভুট্টার আয়ুষ্কাল ১১০ থেকে ১৩০ দিন হওয়ায় এবং ফলন, চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের বিভিন্ন ফসল চাষে প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০