এটিএম সেলিম সরোয়ার, জয়পুরহাট:‘আলু আর ধান কালাইয়ের প্রাণ।’ এবার সত্যিই প্রাণ ফিরে পেয়েছে কালাই উপজেলার আলুচাষিরা। আগাম চাষের আলু তোলায় ব্যস্ত এখন কৃষক। অনুকূল আবহাওয়া আর সময়মতো সার ও বীজ পাওয়ার কারণে এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে। বাজারে আলুর দামও বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক লক্ষ করা গেছে।
আলুচাষিরা জানান, এখন যারা আলু তুলছেন, তারা বিক্রি করে লাভের মুখই দেখছেন। চাষাবাদ, সার, বীজ, সেচ ও শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ভালোই লাভ টিকছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর বাজার প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বৃদ্ধি পেলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন তারা ফলনের সঙ্গে মোটা অঙ্কের লাভের মুখও দেখবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার হিচমি, ভাদসা, ক্ষেতলাল উপজেলার মুন্দাইল, পাঁচবিবি উপজেলার চাটখুর, কালাই উপজেলার হাজিপাড়া মাঠসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব মাঠ থেকে তারা মিউজিকা, গ্যানোলা, ক্যারেজ, রোমানা, পাকরি ও স্ট্রিক জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন।
গতকাল সকালে কালাই উপজেলার মোলামগাড়ী হাটে আলু বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, বাজারে প্রতি মণ ক্যারেজ আলু ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর লাল স্ট্রিক আলু ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা মণ। আলুর দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা খুশি। এভাবে চলতে থাকলে চাষিরা এবার লাভের মুখ দেখবেন।
৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলু চাষ করেছেন কালাই উপজেলার বালাইট গ্রামের আলুচাষি আবুল কাশেম। তিনি বলেন, রোপণের ৬০ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে ফলন হয়েছে ৯০ মণ। ফসলের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। ৭২০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৬৫ হাজার টাকায়। তাতে লাভ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। মাঠে আরও আলু আছে। ১০-১৫ দিন পরে সেগুলোও তুলতে হবে। এবার আলুর দাম যদি এ রকম থাকে, তাহলে মোটামুটি লাভের মুখ দেখা যাবে। পাশাপাশি গত কয়েক বছরের লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে যাবে।
সদর উপজেলার হিচমি গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানো, বহনসহ যাবতীয় কাজ করেছি আমি ও পরিবারের লোকজন। বাইরের শ্রমিককে নিতে হয়নি। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। দুই বিঘা জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ১৩০ মণ। ৬৬০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে প্রায় ২১ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আলু বিক্রি করে এবার ভালোই লাগছে।
মোলামগাড়ী হাটের পাইকার সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচা মালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। আমদানির ওপর দাম ওঠা-নামার বিষয় নির্ভর করবে। তবে গত সপ্তাহ থেকে মোকাগুলোতে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম প্রতি মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সদর উপজেলায় সাত হাজার ১০০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে সাত হাজার হেক্টর, কালাইয়ে ১১ হাজার ১০০ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার হেক্টর এবং আক্কেলপুরে ছয় হাজার ১৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেশি হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল করিম বলেন, বাজারে রোমানা পাকরি ও দেশি পাকরি (লাল) আলু এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এ আলু এক সপ্তাহ পূর্বে এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ৮০ টাকা মণ ছিল। আর মিউজিকা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকা মণ। এই আলু গত সপ্তাহে ছিল ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে এবার চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন। এবার আলুর দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বাইরের অনেক দেশই বাংলাদেশের আলু নেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সবকিছু মিলে দেশে-বিদেশে এবার আলুর চাহিদা রয়েছে।