নিজস্ব প্রতিবেদক: সংযুক্ত আরব আমিরাতের উড়োজাহাজর সংস্থা ফ্লাই দুবাইয়ের সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সেবাগ্রহীতারা। একটি আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও তাদের সেবার মান লোকাল বাসের চেয়েও খারাপ বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী যাত্রী ও তাদের স্বজনরা। দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তবে তাদের সেবার মানোন্নয়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার। ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে সৌদি আরবের জেদ্দাগামী একটি ফ্লাইটের যাত্রীরা নানাভাবে পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঢাকা থেকে জেদ্দা পৌঁছাতে যাত্রীদের সময় লেগেছে ৩৮ ঘণ্টা। ওই ফ্লাইটে ভ্রমণকারী একাধিক যাত্রী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ফ্লাইটটির নম্বর এফজেড ৫০২/এফজেড ৮২৯। যদিও এ ফ্লাইটের সময় পরিবর্তন করা হয় মাত্র ১২ ঘণ্টার নোটিশে। ফলে নানা ধরনের অনিশ্চয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উমরাহ যাত্রীরা ভোর ৬টার মধ্যে বিমানবন্দরে হাজির হন। ওই ফ্লাইটে একটি কাফেলার ৫০ জনের মতো উমরাহ যাত্রী ছিলেন। সাধারণত এ উড়োজাহাজ সংস্থাটি দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে। সেখান থেকে পৃথক ফ্লাইটে যাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠানো হয়। কিন্তু উল্লেখিত ফ্লাইটের ১৩ জন যাত্রীকে দুবাইতে ফেলে কানেকটিং ফ্লাইটটি জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। মূলত বোর্ডিং পাশে ভুল থাকার কারণে তাদের সেখানে নামিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, ঢাকা থেকে বোর্ডিং পাস ইস্যু করার সময় ফ্লাইট-সংশ্লিষ্টরা এ ভুলটি করেন। ফলে দুবাইতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় উমরাহ পালনে সৌদি আরবগামী ১৩ যাত্রীকে। এই ২৪ ঘণ্টা সময়ে ফ্লাই দুবাইয়ের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। সাধারণত উড়োজাহাজ সংস্থার ভুলের কারণে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা আগে থেকে যাত্রীদের জানানো হয় এবং তাদের ট্রানজিটকালীন অবস্থানের সুব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ফ্লাই দুবাইয়ের ওই যাত্রীদের দুবাতে অবস্থান, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়নি। ২৪ ঘণ্টা একটি দুর্বিষহ সময় পার করেছেন তারা।
উমরাহ পালনে গমনকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বৃদ্ধ এবং তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন মহিলা। বয়স বেশি হওয়ায় অনেকেরই ডায়বেটিসের সমস্যা রয়েছে। এভাবে দুবাইতে অপেক্ষারত থাকায় তারা ছিলেন চরমভাবে উৎকণ্ঠিত। বিশেষ করে, যাত্রীদের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের মানুষ এবং অনেকেই প্রথমবার বিমানে আরোহণ করেছেন। কাজেই তাদের এ ধরনের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে স্বজন বা এজেন্সির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। উমরাহ যাত্রীদের স্বজনদের পক্ষ থেকে ফ্লাইটের টিকিট বিক্রিকারী এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও একেক সময় একেক ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। এতে উমরাহ যাত্রীদের স্বজনরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এভাবে ফ্লাই দুবাইয়ের স্থানীয় বিক্রয় কার্যালয় ও টিকিটিং এজেন্সির সঙ্গে বারংবার যোগাযোগের পর অবশেষে দুবাইয়ে অবতরণের ২৪ ঘণ্টা পর আরেকটি ফ্লাইটে ওই ১৩ যাত্রীকে জেদ্দায় পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে এক উমরাহ যাত্রীর স্বজন এম মনিরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইট পরিচালনায় পেশাদারিত্বের চরম ঘাটতি রয়েছে। এমন জটিলতা হলে যাত্রীয়দের থাকা-খাওয়াসহ আনষঙ্গিক সেবার ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু তারা তাদের ভুলে দুবাইতে ফেলে যাওয়া যাত্রীদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই করেনি। এমনকি মাত্র ১২ ঘণ্টার নোটিশে ফ্লাইটের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমার বোন ও ভগ্নিপতিসহ ওই ১৩ উমরাহ যাত্রী ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার ৩৮ ঘণ্টা পর জেদ্দায় পৌঁছান। এই পুরো সময় ওই যাত্রী ও তাদের স্বজনদের জন্য এক দুর্বিষহ সময় কেটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বজনরা বয়স্ক মানুষ। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টায় ফ্লাই দুবাইয়ের পক্ষ থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেয়া হয়নি; খাবার দেয়া হয়নি। এমনি তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।’
সাধারণত আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর স্থানীয় পর্যায়ে নিজস্ব অফিস থাকে। কিন্তু ঢাকা ফ্লাই দুবাইয়ের নিজস্ব কোনো কার্যালয় নেই। ফলে এসব জটিলতার বিষয়ে টিকিট ইস্যুকারী এজেন্সি ছাড়া কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগের
সুযোগ ছিল না। এছাড়া টিকিট বিক্রিসংক্রান্ত স্থানীয় একটি অফিস রয়েছে রাজধানীর গুলশানে। এটিকে সাধারণত জিএসবি অফিস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এ বিষয়ে গতকাল বিকালে ফ্লাই দুবাইয়ের স্থানীয় অ্যাসিসট্যান্ট সেলস ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম মুকুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে বিষয়টি জেনেছি। আমরা যোগাযোগ করতে চেষ্টা করছি, যত দ্রুত সম্ভব এটি সমাধান করছি।’
এসএম আলমগীর ও নাসরিন বেগম নামে দুই উমরাহ যাত্রীর স্বজন নুরুজ্জামান তানিম বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। দুবাইয়ের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে আরেকটি কানেকটিং ফ্লাইটে আমার মা ও বাবার জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের দুবাই বিমানবন্দরে ফেলে রেখেই কানেকটিং ফ্লাইটটি জেদ্দার উদ্দেশে রওনা করে। কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা কোনো কিছুই জানতে পারিনি। উড়োজাহাজ সংস্থা চরমভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থা থেকে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সাধারণ ফ্লাইট পরিচালনায় এ ধরনের আচরণ ভয়ংকর অনিয়ম হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর জন্য বড় ধরনের ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের আদালতেও এ বিষয়ে মামলা রুজু হওয়ার নজির রয়েছে। এভাবে সেবা দিতে থাকলে এ উড়োজাহাজ সংস্থাটিও আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে বলে উড়োজাহাজ সেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানান। তাছাড়া উড়োজাহাজ সেবা ব্যবসায় সুনাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো উড়োজাহাজ সংস্থার একবার দুর্নাম হয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতে স্পর্শকাতর এ সেবাটি প্রদানে পেশাদার ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।