আলু গাছে টমেটোর জোড় কলমে আলোড়ন সৃষ্টি

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আলু গাছে টমেটোর জোড় কলম করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক মনির। কৃষিতে নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার ও ফসল চাষাবাদ করার প্রতি ঝোঁক তার। এর আগে তিত বেগুনে টমেটোর জোড় কলম করলেও এবার ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন তিনি।

জানা যায়, মনিরের বসবাস রাজশাহী শহরে হলেও গোদাগাড়ীর কৃষক হিসেবে সমধিক পরিচিত। উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে তার কৃষি খামার। এ কৃষকের নতুন নতুন ফসল চাষাবাদে এ অঞ্চলের কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এবার খামারে জোড় কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে ৪০টি আলু গাছে তৈরি করেছে টমেটোর গাছ। আলুর গাছে টমেটোর গাছ তৈরি করে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে মনির।

দূরদূরান্ত থেকে তার এই জোড় কলম পদ্ধতির টমেটোর গাছ দেখতে আসছেন কৃষকরা। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা আসছে তার কৃষি খামারে আলু গাছে তৈরি করা টমেটোর গাছ দেখতে। টমেটো এবং আলু উভয়ই একই গোত্রের অর্থাৎ দীর্ঘ রাত্রির উদ্ভিদ। এ কারণে এদের মধ্যে জোড় কলম পদ্ধতি বেশ কার্যকর। উভয় গাছেই থাকে আল্কালয়েড নামক একপ্রকার উপাদান যা তাদের পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে।

জোড় কলমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা সময় এবং স্থান সাশ্রয়ী। একই গাছে আলু এবং টমেটো উৎপাদনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব বলে দাবি করছেন এই চাষি।

উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, আলু এবং টমেটো একই গাছে উৎপাদন করার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এ। যুক্তরাজ্যের গবেষকরা সম্প্রতি এই ধারণার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তারা একই গাছে উপরে টমেটো আর নিচে আলু ফলাতে সক্ষম হয়েছেন যাতে আলু ও টমেটোর স্বাদ অক্ষুণœ থাকে। এই কাজের জন্য তারা জিন প্রকৌশল নয়, গ্রাফটিং বা জোড় কলমের আশ্রয় নিয়েছেন। টমেটোর সঙ্গে আলুর জোড় কলম পদ্ধতিতে আলু ও টমেটো একই গাছে উৎপাদন করা সম্ভব।

পদ্ধতি জানতে চাইলে মনির জানান, একটি প্রাপ্তবয়স্ক আলু গাছকে (যাকে স্টক বলা হয়) মাটি থেকে প্রায় ১ ইঞ্চি উপরে ভি শেপ করে কেটে নিয়ে উপরের অংশটি ফেলে দিতে হবে।

অন্যদিকে একটি টমেটো গাছকে (যাকে সায়ান বলা হয়) মাটি থেকে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি কেটে আগাসহ উপরের অংশটি কেটে নিতে হবে। এ কাজের জন্য আলু গাছের সমান ব্যাস বিশিষ্ট টমেটো গাছ নিলে গ্রাফটিং বা জোড় কলম করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হয়। তারপর টমেটো গাছের কাটা অংশটি আলু গাছের কাটা অংশটির ওপর প্রতিস্থাপন করতে হবে। একে বলা হয়, গ্রাফটিং বা জোড় কলম। গ্রাফটিং করা অংশটি গ্রাফটিং রেপিং টেপ দিয়ে ভালোভাবে পেঁচিয়ে দিতে হবে। প্রতিস্থাপিত অংশ থেকে নতুন পাতা গজানোর আগ পর্যন্ত রেপিং টেপ খোলা যাবে না।

টিভিতে আলু গাছে জোড় কলম পদ্ধতিতে টমেটোর গাছ তৈরি করা দেখে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ৪০টি আলু গাছে জোড় কলম পদ্ধতিতে টমেটো গাছ তৈরি করেছেন। এতে সে সফল হয়েছে বলেও জানায় মনির।

মনির বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলা টমেটোর জন্য সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত। দেশের সিংগভাগ টমেটো উৎপাদন হয় এ উপজেলায়। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে কৃষকেরা টমেটোর তেমন দাম পাই না। তাই এ উপজেলার কৃষকরা টমেটোর ক্ষেত থেকে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টমেটো সংগ্রহ করে। তারপর টমেটোর গাছ কেটে বোরো ধানের আবাদ করে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে এ উপজেলায় আর টমেটো পাওয়া যায় না। এপ্রিল মে মাসে টমেটোর আবার বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাই। তাই এপ্রিল মে মাসে টমেটোর বাজার ধরার জন্য অল্প পরিসারে হলেও এ পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে চান তিনি।

মনির বলেন, আলু গাছ ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হলেই আলু গাছে টমেটোর জোড় কলম ভালো হচ্ছে। আলু গাছ বেশি বড় হলে জোড় কলম ভালো হচ্ছে না। জোড় কলম করার ৪ থেকে ৫ দিনের মাথায় টমেটোর কাণ্ড থেকে কুশি ছাড়তে শুরু করে। পাতা সজীব ও সতেজ হলে পলিথিনের ব্যাগ খুলে ফেলতে হয়। পলেথিন ব্যাগ খুলতে সময় লাগে ৭ থেকে ১০ দিন। জোড় কলম করার ১৫ দিনের মাথায় টমেটোর ফুল আসতে শুরু করে। ১ থেকে দেড় মাসের মাথায় ফল টমেটোর গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়।

সে আর বলেন, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটির নিচে আলু এবং মাটির ওপরে টমেটো। একই গাছ থেকে দুই রকম সবজি পাওয়া যাবে। এমনকি ৩ থেকে সাড়ে ৩মাস টমেটো পাওয়া যাবে। কারণ আলু লাগানোর পর ক্ষেত থেকে আলু তুলতে সময় লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস।

এ পদ্ধতিতে টমেটোর গাছ আর বৃদ্ধি করবেন কি না প্রশ্নের জবাবে কৃষক মনির বলেন, এবার পরীক্ষামূলক ৪০টি আলু গাছে টমেটোর জোড় কলম করেছি। আর বৃদ্ধি করার ইচ্ছা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহম্মেদ বলেন, আলু গাছে টমেটোর জোড় কলম করার মতো বিষয় জানতে পেরেছি। আমাদের কৃষক মনির এটি করে দেখিয়েছেন। এখনও এটি কমার্শিয়াল হয়নি তিনি শুধু একা করেছেন। আমরা বিস্তারিত গবেষণা, যাচাই-বাছাই করে তবেই কৃষককে তিনি বিষয়ে জানাবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০