সংস্কারের ১১ শর্তে মিলবে এক বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে মোট ৪৮টি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে ১১টিই হচ্ছে সংস্কারমূলক শর্ত, যা পূরণ করতে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে আইএমএফ। এই সংস্কারগুলো ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে সম্পন্ন করতে হবে বলে জানা গেছে। এসব শর্ত পালন করা সাপেক্ষে পাওয়া যাবে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ।

আইএমএফ সংস্কারমূলক যে ১১টি শর্ত দিয়েছে, সেগুলো হলোÑসরকারকে চলতি বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে জনস্বার্থে একটি টেকসই সরকারি ক্রয় নীতি গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে সেই নীতির সঙ্গে জলবায়ু-সংক্রান্ত কার্যাবলি ও সবুজায়নের কর্মপরিকল্পনার সমন্বয় সাধন করতে হবে। দ্বিতীয় সংস্কারের শর্ত হলো সরকারকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জ্বালানি পণ্যের দাম নির্ধারণের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ান্তে একটি ফর্মুলাভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তৃতীয় শর্ত হলোÑব্যাংকগুলো যাতে জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকির প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে এবং এটির সঙ্গে জলবায়ু-সংক্রান্ত অর্থায়নের আর্থিক বিবরণীর সুপারিশমালাকে সংযুক্ত করতে হবে। চতুর্থ শর্ত হলোÑআগামী বছরের জুনের মধ্যে সরকারকে সামাজিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

এ পঞ্চম শর্তে উল্লেখ করা হয়েছেÑআগামী জুনের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার জন্য একটি পদ্ধতি প্রণয়ন করে তা এমটিএমএফের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি নিরূপণ করে তা বাজেটের নীতি বিবৃতিতে (এমটিএমপিএস) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ষষ্ঠ শর্ত হলোÑ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে গ্রিন বুকের হালনাগাদ তথ্যের ওপর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, যার মাধ্যমে জলবায়ু-সংক্রান্ত পরিস্থিতিসমূহ এর পদ্ধতিসমূহের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে খাতনির্দিষ্ট সম্পূরক নির্দেশিকা প্রণীত হবে। সপ্তম শর্ত হলোÑএকই সময়ের মধ্যে সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মপরিকল্পনাসমূহে জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত পরিস্থিতিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি হালনাগাদ নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে।

আইএমএফের অষ্টম শর্তে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সরকার একটি হালনাগাদ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) নীতি ও কাঠামো গ্রহণ করবে। পাশাপাশি এ নীতির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রণয়ন করবে।

নবম শর্তে বলা হয়েছে, সরকার গ্রিন বুকের শেষ দিকে একটি নির্ঘণ্ট অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে, যার মাধ্যমে প্রধান প্রধান অবকাঠামো প্রকল্পের প্রাধিকার নির্ধারিত হবে। এ বিষয়টি জাতীয় উন্নয়ন পরিষদ ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।

দশম সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত অ্যাকাউনটিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করে সরকারি আইবিএএস++ সিস্টেমে সম্পদের হিসাব নির্দিষ্টকরণের পাশাপাশি জলবায়ু ঝুঁকি-সংক্রান্ত অর্থায়ন বিষয়ে নতুন মডিউল প্রণয়ন করতে হবে। আর সবশেষে একাদশ শর্তে বলা হয়েছে গ্রিন বন্ড অর্থায়ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হাল নাগাদ নীতি প্রণয়ন করতে হবে। বিশেষ করে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার সঙ্গে এ নীতির সমন্বয় সাধন করতে হবে।

তথ্যমতে, আইএমএফের সংস্কারের প্রথম শর্ত পালনে এ বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ পাবে ১৬৬ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার। আর আগামী বছরের মে মাসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শর্ত পালনে পাওয়া যাবে মোট ১৬৬ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম শর্ত পালনে আগামী বছরের নভেম্বরে পাওয়া যাবে ১৬৬ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের মে মাসে যষ্ঠ ও সপ্তম শর্ত পালনে পাওয়া যাবে ১৬৬ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার। একই বছরের অক্টোবরে অষ্টম ও নবম শর্ত পালনে পাওয়া যাবে ১৬৬ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার এবং সবশেষে দশম ও একাদশ শর্ত পালনে ২০২৬ সালের মে মাসে পাওয়া যাবে  ১৬৬ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার। এভাবে মোট এক বিলিয়ন ডলার আগামী ২০২৬ সালের মে মাসের মধ্যে পাবে বাংলাদেশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০