নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ১৯৯৩ সালে স্বল্প পরিসরে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছিল। সেই মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেশীয় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক, বিআরবি কেবল, হাতিলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বিশ্বজুড়ে পণ্য রপ্তানি করছে। আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০ একর জায়গায় স্থায়ী ভেন্যু দরকার। এটা করা হলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা আরও সাফল্যের গল্প রচনা করতে পারবে।
গতকাল নগরের আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। নগরের রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ৩০তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হচ্ছে আগামীকাল। এদিন বিকাল ৩টায় মেলা উদ্বোধন করবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমাদের মেলায় ২০ লাখ দর্শক ক্রেতা সমাগম হয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, জ্ঞানভিত্তিক ব্যবসায়ী গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে এবারের মেলায় বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে। এবারের মেলায় ২০টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৫৬টি প্রিমিয়ার স্টল, ১৪টি গোল্ড স্টল, ৪৮টি মেগা স্টল, ১১টি ফুড স্টল, ৩টি আলাদা জোন নিয়ে ৪০০টি স্টলে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এবারের মেলায় নিজস্ব পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশ যেমনÑভারত, থাইল্যান্ড ও ইরান বিভিন্ন স্টলের মাধ্যমে তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে।
তিনি বলেন, এ মেলায় অংশ নিয়ে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক, বিআরবি কেবল, হাতিলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করছে। আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা একটি স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণ স্থাপনে ১০ একর জায়গা চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। এই জমি পেলে মেলার স্থায়ী ভেন্যু স্থাপন করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেলা আয়োজন কমিটির চেয়ারম্যান ও চেম্বারের পরিচালক একেএম আকতার হোসেন, অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্র, সন্ধানী, রাইট অ্যাকশন ফর ডিজএবিলিটি (র্যাড), বধির ক্রীড়া ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা এবং ইলেকট্রিশিয়ান কল্যাণ সমিতিকে বিনামূল্যে একটি করে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মেলায় আসা দর্শক ক্রেতার সুবিধার্থে সার্বক্ষণিকভাবে একটি ইনফরমেশন বুথ বা তথ্য কেন্দ্র চালু থাকবে। মেলায় অংশগ্রহণকারী ও আসা দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মেলা প্রাঙ্গণে পুলিশ বাহিনী তিন শিফটে বিভক্ত হয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নিরাপত্তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে দক্ষ প্রাইভেট সিকিউরিটির সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মেলার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। আর অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম মেলা চলাকালে সর্বদা মেলা প্রাঙ্গণে অবস্থান করবে।
নতুন সংযোজন হিসেবে শিশুদের বিনোদনের জন্য মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মেলা শুধু বাণিজ্যের স্থান নয়, এটি নগর জীবনে একে অন্যের সঙ্গে মেলবন্ধনের একটি সুযোগ। তাই বসার সুবিধাসহ ফোয়ারা সমৃদ্ধ ১২ হাজার ৩২০ বর্গফুট জুড়ে একটি উš§ুক্ত প্লাজা রাখা হয়েছে। মেলা চলাকালে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার মেলা পরিদর্শন করবেন। এতে করে সেসব দেশে আমাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এ মেলা পরিদর্শন করবেন, যা দেশীয় শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে। এছাড়া মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্টল, প্যাভিলিয়ন ও দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী নির্বাচন করে বিশেষ পদক এবং সনদ দেয়া করা হবে।
উল্লেখ্য, মেলায় প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। বিভিন্ন স্কুলের প্লে থেকে ৭ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর মাসব্যাপী মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।