নিয়াজ মাহমুদ: মাত্র চার মিনিটেই শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারে ‘জেড’ ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। সভায় শেয়ারহোল্ডাররা বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করলে শুরু হয় হট্টগোল। এ পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে এজিএম সমাপ্ত ঘোষণা করে পুলিশ পাহারায় সভাস্থল ত্যাগ করেন কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তা। এদিকে এজিএম পন্ড হলেও তা ‘সফল’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন কোম্পানি সচিব এমএ রহমান এফসিএস।
জানা যায়, পিপলস লিজিংয়ের এজিএমে আলোচ্য বিষয় ছিল ছয়টি। বহিরাগতদের মাধ্যমে মাত্র চার মিনিটেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সবকটি বিষয় অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শেয়ারহোল্ডাররা। একই সঙ্গে পুনরায় এজিএম করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কনভেনশন হলে কোম্পানিটির ২০তম বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়। কোম্পানি সচিবের উপস্থাপনায় সভায় কোম্পানির চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীসহ অন্যান্য পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সভা শুরু হওয়ার মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই আলোচ্য ছয়টি বিষয় উপস্থাপন করে উপস্থিত বহিরাগতদের সম্মতিতে এগুলো অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয় এবং কোম্পানির নিজস্ব ক্যামেরায় তা ধারণ করা হয়। এসব চিত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ সময় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনেকেই কনভেনশন হলের বাইরে অবস্থান করছিলেন। কেউ কেউ হলের ভেতরে থাকলেও দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেননি। বাইরে থাকা শেয়ারহোল্ডাররা সভাকক্ষের ভেতরে ঢুকতেই শুরু হয় হট্টগোল। সঙ্গে সঙ্গে সমাপ্তি ঘটে সাধারণ সভাটির। উপস্থিত কাফরুল থানার পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপে কোম্পানির পরিচালকদের সভাস্থল ত্যাগ করতে দেখা গেছে। এ সভায় অংশ নিয়েছেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার মামুন হোসেন। সভায় মতামত দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভের সঙ্গে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সভা শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেছে! পরিচালকদের দুর্নীতিতে কোম্পানিটি ডুবতে বসেছে। শেয়ারহোল্ডারদের এড়িয়ে যেতে অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের নিয়ে এজিএম করেছে। আমরা এ এজিএম মানি না।’
তিনি আরও বলেন, এজিএম বাস্তবায়ন করার জন্য প্রায় শতাধিক লোক ভাড়ায় আনে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যেহেতু কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি, তাই প্রায় দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে এজিএম পার্টি সম্পন্ন করতে চুক্তি করেছে। এ কারণেই মাত্র চার-পাঁচ মিনিটের মাথায় এজিএম শেষ হয়েছে।
এ সময় পুনরায় ২০তম এজিএমের আয়োজন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করেন একাধিক শেয়ারহোল্ডার।
দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান ‘ট্রিপল বি-২’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-৩’-এ থাকা কোম্পানিটির সাধারণ সভায় যোগ দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি সেলিম চৌধুরী। সভাস্থল থেকে বের হয়ে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সমাপ্ত অর্থবছরে কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি পিপলস লিজিং। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে মর্মাহত। আর কোম্পানির এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মানতে বাধ্য করতেই এজিএমে বহিরাগত লোকজন এনে সকল এজেন্ডা পাস করার পাঁয়তারা করেছে।’
কথা হয় কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিেক বলেন, এখানে পিপলস লিজিংয়ের সভাটি সাড়ে নয়টায় শুরু হয়। খুব শান্ত পরিবেশেই চলছিল। মাত্র চার-পাঁচ মিনিটের মাথায় একটু সমস্যা দেখা দেয়। তা নিয়ন্ত্রণের আগেই সভাটি শেষ হয়ে যায়।
এদিকে এজিএমের বিষয়ে সভাস্থলে শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এমএ ইউসুফ খান। পরে রাজধানীর পল্টনে পিপলস লিজিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে কোম্পানি সচিব এমএ রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণে ‘আজকের সাধারণ সভা সফল হয়েছে। আজ যতটুকু হট্টগোল হয়েছে, তা সব কোম্পানির এজিএমেই হয়।’
বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বড় ধরনের ঋণাত্মক হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থিতিশীল ছিল না। তাই কোম্পানির আয় কম হয়েছে। এর চেয়ে আমি বেশিকিছু বলতে পারব না, কারণ আমি এ কোম্পানিটিতে সবেমাত্র যোগ দিয়েছি।’
জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ সুপারিশ না করায় এরই মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালের হিসাব বছরে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে তিন টাকা তিন পয়সা, আগের বছর যেখানে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৭৬ পয়সা। ২০১৪ সালের লভ্যাংশ হিসেবে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারপ্রতি এক টাকা ৪৪ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে পিপলস লিজিং, যেখানে আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১০ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১১ টাকা ৬৮ পয়সা, ২০১৫ সালের একই তারিখে যা ছিল ১৭ টাকা ৬২ পয়সা।
পিপলস লিজিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ২৮৫ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৬৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আট দশমিক ২১ শতাংশ, বাকি ৪৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।