স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। ষাট বছরের চলচ্চিত্রজীবনে তিনি তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদিবাড়ি কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কয়া গ্রামে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার সিটি কলেজ থেকে আইএসসি ও পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অব আর্টসে দুবছর পড়াশোনা করেন। কলেজজীবনেই তার মঞ্চাভিনয়ে হাতেখড়ি। কিছুদিন অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঘোষক হিসেবে কাজও করেন এবং সেইসঙ্গে মঞ্চে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৮ সালে উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো বিখ্যাত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেন। সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিতে তিনি অভিনয় করেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, ও টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত চরিত্রগুলোর ভেতরে সব থেকে জনপ্রিয় হলো ফেলুদা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ‘ফেলুদার’ ভূমিকায় অভিনয় করেন। পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়, নাট্য পরিচালনা ও নাট্য রচনাতেও তিনি সফল হন। আবার সাহিত্যজগতেও ছিল তার অনায়াস পদচারণ। তিনি ১৪টি কবিতার বই লিখেছেন। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑশ্রেষ্ঠ কবিতা, মানিকদার সঙ্গে, চরিত্রের সন্ধানে, প্রতিদিন তব গাঁথা, শব্দরা আমার বাগানে, মধ্য রাতের সংকেত, পরিচয় প্রভৃতি। লিখেছেন নাটক সমগ্র-১ ও নাটক সমগ্র-২। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে তাপসী, নামজীবন, রাজকুমার, নীলকণ্ঠ, চন্দনপুরের চোর ও ফেরা উল্লেখযোগ্য। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৯১ সালে প্রথম জাতীয় পুরস্কার, ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ, ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, ২০১২ সালে আকাদেমি পুরস্কার ও ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে লাভ করেন। ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকারের দেয়া লিজিওন অব অনারে ভূষিত হন। তিনি ২০২০ সালের ১ অক্টোবর কভিডে আক্রান্ত হন। একই বছরের ১৫ নভেম্বর কভিড-পরবর্তী জটিলতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০