নানা জটিলতায় আমনে মন নেই ময়মনসিংহের কৃষকদের

রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মূলত ধান উৎপাদনকারী অঞ্চল। দেশের ১৪টি অঞ্চলের মধ্যে বৃহৎ ধান উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এ জেলা। চলতি বছর ময়মনসিংহে অনাবৃষ্টির কারণে আমন ধান কিছুটা দেরিতে আবাদ হয়। এ কারণে ফসল কাটাও দেরিতে শুরু হয়। তবে এরই মধ্যে জেলার শতভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। অতিরিক্ত সূর্যালোক ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার ফলন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দুই শতাংশ বেশি। তবু নানা জটিলতায় এবার আমন মৌসুমে ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে কয়েকটি উপজেলা বাদে পুরো জেলার খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে গেছে। সময় শেষ হয়ে এলেও ধান সংগ্রহের পরিমাণ এখনও শূন্যের কোঠায়। এ পর্যন্ত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ। এদিকে ধান-চাল সংগ্রহের সময় শেষ হচ্ছে চলতি মাসে। এ সমস্যার জন্য ধান-চালের বর্তমান বাজারদরকে প্রধান কারণ বলে দাবি করেছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে ২৮ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৪২ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য বিভাগ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে গত বছরের ১৭ নভেম্বর, যা চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জেলায় চলতি বছর আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫২৮ টন। প্রথম দিকে জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৭৭৬ টন, কিন্তু খাদ্য বিভাগ সংগ্রহ করতে না পারায় সমাপন করে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৬ হাজার ৪৩৮ টন। তবে শেষ পর্যন্ত মিলারদের সঙ্গে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৭৮২ টনে। এর মধ্যে জেলার ১৩টি উপজেলার ১৯টি খাদ্য গুদাম মিলে মোট ১৬ হাজার ৮১৮ টন চাল কিনতে পেরেছে। কিন্তু কোনো গুদাম এক মুঠো ধান কিনতে পারেনি। এ বছর আমন চাল সংগ্রহের জন্য জেলার ১৫৬ জন মিলারের সঙ্গে চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ রোপা আমন মৌসুমে জেলার দুই লাখ ৬৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় তিনটি জাতের ধান চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়, যেখানে হেক্টর প্রতি ধানের গড় ফলন ২ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন এবং মোট উৎপাদন সাত লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৯ মেট্রিক টন।

বিভিন্ন উপজেলার ধানের মোকামে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এবার মৌসুমের শুরুর দিকে ধান মণপ্রতি ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হলেও কয়েক দিন পরে তা বেড়ে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

মুক্তাগাছা উপজেলার কৃষক বারেক মিয়া বলেন, আমি শুরুতেই ধানের ভালো দাম পাওয়ায় এক হাজার ৩০০ টাকায় ১০ মণ ধান বিক্রি করেছিলাম এবং কয়েক দিন পর এক হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে আরও ধান বিক্রি করেছি। পাইকাররা বাড়িতে এসে ধান মেপে কিনেছে। বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান দিয়ে অযথা ঝামেলায় আর যাইনি।

আরেক কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক জটিলতা, তাদের মনমতো না হলে নেয় না। এছাড়া বাজারে কাঁচা ধানের ভালো দাম পাওয়া যায়।’

সদরের ধান ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, মৌসুমের শুরুতে ধানের বাজার চড়া ছিল। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের তুলনায় বাজারদর এখনও বেশি থাকায় আমরা ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো ধান সরবরাহ

করতে পারিনি।

গুদামে চাল সরবরাহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ধানের দাম সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। মিল মালিকরা লাইসেন্স বাঁচানোর জন্য খাদ্যগুদামে চাল দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, সরকারের ধান-চালের বেঁধে দেয়া দামের তুলনায় গ্রামের হাটবাজারে ধানের দাম বেশি, তাই সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে কৃষকের আগ্রহ নেই। তবে সরকারের যে উদ্দেশ্য ছিল, তা বাস্তবায়িত হয়েছে, কৃষকরা তাদের ধানের ভালো দাম পাচ্ছে। আর যে মিলগুলো চুক্তি করেও চাল দেয়নি, মৌসুম শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া মিলগুলোকে লাইসেন্স স্থগিত বা জামানত বাজেয়াপ্তের মতো শাস্তির আওতায় পড়তে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০