নিজস্ব প্রতিবেদক: বহু আগে থেকে সারা বিশ্বে স্টিল স্ট্রাকচারড বিল্ডিংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। তবে খুব কম সময়ের স্টিল স্ট্রাকচার দেশে ব্যবহƒত হচ্ছে। বর্তমানে দেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের প্রি-ইঞ্জিনিয়ার্ড অর্থাৎ স্টিল স্ট্রাকচারড বিল্ডিং। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বাজারে একক কোম্পানি হিসেবে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে কেআর স্টিল স্ট্রাকচার লিমিটেড।
মূলত ভূমিকম্প সহনশীল ও সহজেই স্থানান্তরযোগ্য, রিসেল ভেল্যু ইত্যাদি বিবেচনায় প্রচলিত আরসিসি বিল্ডিয়ের পরিবর্তে স্টিল স্ট্রাকচারড বিল্ডিং বা স্থাপনা নির্মাণে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তাছাড়া স্টিল কাঠামোর ভবন নির্মাণে কয়েকগুণ সময় কম লাগছে। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই উৎপাদনে যাওয়া যায় বলে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে স্টিল স্ট্রাকচারই প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছে। স্টিল স্ট্রাকচার একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। আরসিসি বিল্ডিংয়ে ইট, বালু, সুরকির ব্যবহার হয়। এগুলো পরিবহন থেকে শুরু করে মিক্সিং পর্যন্ত সব ধাপেই পরিবেশ দূষণ করে। এছাড়া আরসিসি বিল্ডিংয়ের তুলনার স্টিল স্ট্রাকচারের ওজন হয় প্রায় অর্ধেক। এতে মাটিতেও কম লোড পড়ে। এসব সুবিধার জন্য বিশেষ স্থাপনা, কারখানা, বাণিজ্যিক ভবনের পাশাপাশি আবাসিক ভবন নির্মাণেও স্টিল স্ট্র্রাকচারের ব্যবহার বাড়ছে। এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে কেআর স্টিল স্ট্রাকচারের পুরোটাই তৈরি করে সীতাকুণ্ড নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে। আর গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইনে এসব কাঠামো ফ্যাক্টরিতে তৈরি করে বিল্ডিং নির্মাণের স্থানে সেটিং করে দেয়। এতে ঝক্কি-ঝামেলা একদমই নেই।
২০১৭ সালে কেআর স্টিল স্ট্রাকচার লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। নিজেই কিছু করার চেষ্টা থেকে স্বপ্নবাজ ম্যানেজিং ডিরেক্টর তসলিম উদ্দিনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটির সৃষ্টি। এরপর শুধু এগিয়ে চলার গল্প। দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক ব্যাপ্তি বাড়ছেই। এরই মধ্যে দেশের বিখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করেছে কেআর স্টিল। যেমন এসিআই গ্রুপ, ফেডারেল গ্রুপ, জিপিএইচ ইস্পাত লি, বিএসআরএম, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, নাহার এগ্রো, স্মার্ট গ্রুপ, রেকিট বেনকিজার্স, চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড,
ভারটেক্স গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস লিমিটেড, সিলেট সিটি করপোরেশন, হাক্কানী পেপার মিল, ক্লিফটন গ্রুপ, বিএম এনার্জি, ইউনিটেক্স গ্রুপ, বিএসএ গ্রুপ, মর্ডান সিনটেক্স, এশিয়ান গ্রুপসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কোম্পানিটির কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেট্রিক টন প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড স্টিলের পণ্য তৈরির সক্ষমতা রয়েছে।
কেআর স্টিল স্ট্রাকচার লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তসলিম উদ্দিন বলেন, স্টিল স্ট্রাকচার সেক্টরকে বাংলাদেশের একটি উদীয়মান শিল্প খাত। বর্তমানে এ শিল্প খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টায় এখন অভ্যন্তরীণ স্টিল স্ট্রাকচারের চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তাই দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় স্টিল স্ট্রাকচার আমদানি সীমিত বা বন্ধ করে দেয়া উচিত। দীর্ঘস্থায়িত্ব, স্থানান্তর সুবিধা এবং জানমালের নিরাপত্তা বিবেচনায় এনে দেশে স্টিল স্ট্রাকচারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়ার প্লান্ট, এলএনজি, রেলওয়ে গ্রিডার, হাইওয়ে ব্রিজসহ বড় বড় প্রকল্পের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। তবে বিদেশি ঠিকাদার ও সরকারি সুযোগপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো শুল্কমুক্ত ফিনিস প্রোডাক্টস আমদানির সুবিধা পাওয়ায় এ শিল্প খাত অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও দেশীয় স্টিল বিল্ডিং শিল্পের পর্যাপ্ত উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এরপরও প্রকল্পের জন্য বিদেশ থেকে শূন্য শুল্কে স্টিল স্ট্রাকচার আমদানি কাম্য নয়। সরকারি অগ্রাধিকার প্রকল্পে দেশে উৎপাদিত স্টিল স্ট্রাকচার ব্যবহার হলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা লাভবান হবে। ফলে দেশে এ শিল্পের বিকাশ ঘটবে। বর্তমানে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা স্টিল স্ট্রাকচার সংশ্লিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে শতকরা ৫-১০ ভাগ হারে কাস্টমস ডিউটি প্রদান করলেও স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্সরা এসব পণ্য আমদানিতে প্রায় ৫০ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করে থাকেন। তারা দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় এ ধরনের শুল্ক বৈষম্য দূর করা দরকার। এ খাতে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকার সম্ভব সব ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া দরকার।