নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেছেন, বর্তমান ভূ-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের অর্থনীতির যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার সেমিনারে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে সুশাসন নিশ্চিকরণের সঙ্গে সঙ্গে কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া ডিসিসিআই সভাপতি বৈদেশিক বিনিয়োগে বহুমুখীকরণ, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের ভ্যালু অ্যাডিশন ৯০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ঔষধ শিল্পের জন্য এপিআই শিল্পপার্কের দ্রুত বাস্তবায়ন, হালকা-প্রকৌশল শিল্পের জন্য পৃথক শিল্পাঞ্চল এবং পাট পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য নগদ সহায়তার প্রস্তাব করেন। কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি বিশেষ করে এ খাতে বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধিকল্পে কমপক্ষে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানান। চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স অনুসরণ, হালকা প্রকৌশল খাতে দক্ষতা উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়াতে শিক্ষাকার্যক্রমের আধুনিকায়নের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় আরও বেশি হারে জোরে দেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
সিএমএসএমই থেকে ‘মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ’কে পৃথকীকরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তারা আরও সহজে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তিতে সক্ষম হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এলডিসি উত্তরণ নিয়ে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে, বিশেষ করে এলডিসি-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে ভ্যালু এডিশনের ওপর আরও বেশি হারে জোর দিতে হবে, এ লক্ষ্যে বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও বেশি হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। বাণিজ্য সচিব বলেন, এলডিসি-পরবর্তী সময়ে রপ্তানির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্ত অপরিহার্য। তিনি বলেন, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশের শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন অতীব জরুরি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরে সরকারের একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও বেসরকারি খাতের কার্যকর সমন্বয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিডার সচিব মোহসিনা ইয়াসমিন বলেন, বিডার ওয়ান স্টপ পোর্টালের মাধ্যমে বর্তমানে ১৮টি সেবা অনলাইনে দেয়া হচ্ছে এবং আগামীতে ৪০টি সংস্থার প্রায় ১৫০টি সেবা এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের উদ্যোক্তাদের এ ধরনের সেবা গ্রহণের হার খুবই কম, যার ফলে সেবা প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা থাকলে তা নিরসনে বিডা কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছে না। তিনি উদ্যোক্তাদের বিডা পোর্টাল ব্যবহার করে অনলাইনভিত্তিক সেবা গ্রহণ বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, শুধু মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিই উন্নয়নের একমাত্র পরিমাপক নয়, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বৈশ্বিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের অর্থনীতি কতটা সক্ষম তা নির্ধারণে নিজেদের হোমওয়ার্ক অতীব জরুরি বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা প্রভৃতি সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়গুলো আমাদের সামাজিক খাত বিশেষ করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলেছে, যা মোকাবিলায় সবাইকে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)’ গুলো আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, তাই সব সেবার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যথাসময়ে এগুলোর কার্যক্রম শুরু করার প্রতি সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মোহাম্মদ আলী হোসেনও আলোচনায় অংশ নেন।