সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। স্থূলতা শিশুর শরীরে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অল্প বয়সে হƒদ্রোগ এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন শিশু স্থূল কি না: শিশুদের নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা পরীক্ষা অনেক রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে। আপাতদৃষ্টিতে শিশুকে বেশি নাদুসনুদুস মনে হলে তার ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ করে বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) নির্ণয়ের মাধ্যমে সঠিকভাবে জানা যাবে আপনার শিশু অতি ওজনসম্পন্ন বা স্থূল কি না।
এই রোগের লক্ষণ কী: প্রাথমিক অবস্থায় শুধু স্থূলতা ছাড়া তেমন বাহ্যিক কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে সমস্যা বেশি হলে লিভার রোগের বিভিন্ন লক্ষণ, যেমন বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা, চোখ ও শরীর হলুদ হওয়া, পেট বড় হয়ে যাওয়া, পেটে ব্যথা, হাত-পা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
রোগনির্ণয়ের উপায়: রক্তে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা যায়। স্থূল শিশুদের কোলেস্টেরল লিভারে জমেছে কি না, তা জানার জন্য প্রাথমিকভাবে এসজিপিটি টেস্ট করা হয়। এ ছাড়া লিভারের আলট্রাসনোগ্রাম করে সমস্যার গভীরতা বোঝা যায়। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলে স্ক্যান বা বায়োপসি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ: স্থূল শিশুর শরীরে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল দেখা দিলে তা কমাতে অ্যান্টিলিপিড ওষুধ ব্যবহার করা যায়। তবে ১০ বছরের নিচের শিশুদের জন্য এই ওষুধের ব্যবহার এখনও স্বীকৃত নয়। মনে রাখতে হবে, লিভারে কোলেস্টেরল জমে যদি ফ্যাটি লিভার রোগ হয়, সেক্ষেত্রে তার সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় রোগনির্ণয় করা গেলে শুধু ওজন কমানোর মধ্য দিয়ে অনেকাংশে এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। তা না হলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওষুধের (ভিটামিন-ই) পাশাপাশি আনুষঙ্গিক সমস্যা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তার চিকিৎসা করা হয়। তাই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি ও তার জটিলতা প্রতিরোধ করতে পরিবারে অধিক চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার, শিশুদের খেলাধুলা ও কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিত করা এবং শিশু যাতে স্থূল না হয়, এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।
ডা. রবি বিশ্বাস
শিশু হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল
